চলমান মহামারীর পরিস্থিতির মধ্যে কবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে আর কবে পরীক্ষা নেওয়া হবে তার কোনোটাই চূড়ান্ত হয়নি। এমনকি এখনই কোনো পরীক্ষার জন্য ফি আদায়ের নির্দেশনাও নেই শিক্ষা প্রশাসনের। তারপরও পাবলিক পরীক্ষার ফরম ফিলাপের নামে টাকা আদায়ে অভিভাবকদের নাজেহাল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে কয়েকটি বেসরকারি স্কুলের বিরুদ্ধে। এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অতিউৎসাহী আখ্যায়িত করে এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন।
কোভিড ১৯-এর সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সংক্রমণের হার কিছুটা নিম্নগতি হওয়ায় গত মার্চ মাসে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তাও করেছিল। ফের সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এ বিষয়ে রাজধানীর মিরপুর ইংলিশ ভার্সন স্কুল এন্ড কলেজের একাধিক অভিভাবক আমাদের সময়কে জানান, তাদের সন্তানের পিইসি পরীক্ষার জন্য এক হাজার টাকা করে দিতে বলছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। কোনো কোনো অভিভাবক টাকা পরিশোধের রশিদ চাইলেও দেওয়া হয়নি। একজন অভিভাবক টাকা পরিশোধ করে স্কুলের রেজিস্ট্রার খাতার ছবি মোবাইল ফোনে তুলে নিয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করোনা মহামারীর মধ্যেও অলাইনে পরীক্ষা নিতে বাড়তি ফি দাবিরও অভিযোগ উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে মিরপুর ইংলিশ ভার্সন স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক ইয়াহিয়া খান রিজন বলেন, শুধু পিইসি পরীক্ষার জন্য এক হাজার টাকা নেওয়া হয়নি। পুরো বছরের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষা, শিট বিতরণ এবং পরীক্ষার ফরমফিলাপের জন্য এই টাকা নেওয়া হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের মধ্যে আদৌ পরীক্ষা হবে কিনা বা সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও কেন পিইসি পরীক্ষার জন্য টাকা আদায় করা হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকার (প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর) তাদেরকে নোটিশ করেছে কতজন পরীক্ষার্থী আছে তার তথ্য দিতে। এর সঙ্গে প্রতি ছাত্রের জন্য ৫০ টাকা করে দিতে হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সরকারি কোনো নির্দেশনা আছে কিনা এ প্রসঙ্গে ইয়াহিয়া খান জানান, তাদের (অনলাইনে) পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বলেছে। তবে এ সংক্রান্ত কোনো আদেশের অনুলিপি তিনি দিতে পারেননি।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ বছর পিইসি পরীক্ষা হবে কিনা? এ জন্য এখনই ফি আদায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয় অনুবিভাগ) রতন চন্দ্র পন্ডিত আমাদের সময়কে বলেন, এখনতো মাত্র এপ্রিল মাস। এখনো পরীক্ষার অনেক সময় বাকি। আমরা এমন এক
পরিস্থিতির মধ্যে আছি, যখন পিইসি পরীক্ষা কখন কীভাবে নেওয়া যাবে কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারছি না। এখন পিইসি পরীক্ষার নামে টাকা নেওয়া অযৌক্তিক। এটি স্কুল কর্তৃপক্ষের অতিউৎসাহ ছাড়া কিছুই না। আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
এ দিকে রাজধানীর মিরপুর ২নং সেকশনে অবস্থিত সেন্ট তেরিজা স্কুলেরও কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, তাদের কাছ থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ অষ্টম শ্রেণির নিবন্ধন এবং ফরম ফিলাপের জন্য দুই হাজার দুইশো টাকা করে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। জেএসসি পরীক্ষার ফরমফিলাপের এখনো শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা নেই কেন এ খাতে টাকা দাবি করা হচ্ছে অভিভাবকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের জানানো হয়েছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ অগ্রিম ফি নিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, সরকার এখনো জেএসসি পরীক্ষার দিনক্ষণ নির্ধারণ করেনি। এমনকি এই পরীক্ষার ফরমফিলাপের জন্য কোনো নির্দেশনা দেয়নি। স্কুলগুলো হয়তো অতিউৎসাহী হয়ে এই খাতে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছে। তবে বোর্ড সিদ্ধান্তের বাইরে পরীক্ষার নামে ফি আদায় করা, কিংবা অতিরিক্ত ফি নেওয়া অন্যায়। অভিভাবকরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বোর্ডে দাখিল করলে, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।