শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সব প্রমাণ আছে : রাষ্ট্রপক্ষ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২১
  • ১৩৮ বার

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে তারই ২৫ সহপাঠীকে। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নির্মম এ হত্যাকণ্ড ঘটে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।

মামলার বিচার প্রায় শেষ পর্যায়ে। রায় হতে পারে আগামী মাসেই। এখন চলছে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়েছে। আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ যুক্তিতর্ক শুনানি গ্রহণ করছেন।

রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, মামলার ২৫ আসামিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়ার মতো সব ধরনের প্রমাণই ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে আসামি পক্ষ বলছে, একটি গোঁজামিল তদন্তের মাধ্যমে ২৫ মেধাবী ছাত্রকে কাঠগড়ার দাঁড় করিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করা হয়েছে। এ সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তার জন্য বুয়েট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিযুক্ত আইনজীবী মো. আবদুস সোবহান তরফদার জানান, তিনি এবং এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল ও প্রসিকিউটর আবু আবদুল্লাহ ভূঁইঞা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। তারা ২৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার বিষয়ে এ আইনজীবী আমাদের সময়কে বলেন, ‘একটি মামলার তিন ধরনের সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা যায়। এগুলো হলোÑ মৌখিক সাক্ষ্য, ডকুমেন্টারি বা দালিলিক সাক্ষ্য এবং সারকমান্সটানশিয়াল এভিডেন্স বা পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য। আমরা মনে করি, এ তিন প্রকার সাক্ষ্য দিয়েই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘মৌখিক সাক্ষ্যে নিহতের বাবাসহ ৪৬ সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু পুলিশ সদস্য ফরমাল সাক্ষী। বাকি মৌখিক সাক্ষীদের মধ্যে রয়েছেন নিহতের বাবা, চাচা, মামা, বুয়েটের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী, চিকিৎসক ও স্বীকারোক্তি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট। নিহতের বাবা এহাজারে ভিডিও ফুটেজ দেখে ১৯ আসামির কথা উল্লেখ করেছেন। পরে ৩ তদন্তে আরও ৬ জনের নাম এসেছে মর্মে সাক্ষ্যে বলেছেন। দশজনের মতো ছাত্র সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের সাক্ষ্যে কোনো না কোনোভাবে জড়িত মর্মে ২৫ জন আসামির নাম বলেছেন। মামলায় ২৫ আসামির মধ্যে ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ছাত্ররা মৌখিক সাক্ষ্যের মাধ্যমে তাদের স্বীকারোক্তির বক্তব্য সমর্থন করে গেছেন। সাক্ষ্য দেওয়া ছাত্ররা বাদী পক্ষের মিত্র না আর আসামিদের শত্রু না, তাই এ সাক্ষীদের অবিশ্বাস করা সুযোগ নেই। আর আবরার যে হত্যা হয়নি এই মর্মে আসামি পক্ষ থেকে কোনো সাজেশনও জেরায় আসেনি। সে ক্ষেত্রে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে, তা প্রমাণ হয়ে গেছে। স্বীকারোক্তি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেটরা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সেখানে প্রমাণ হয়েছে আসামিরা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি করেছেন। আসামি পক্ষের জেরা সে বিষয়েও কোনো সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারেনি। ফলে ৮ আসামির স্বীকারোক্তি তাদের ক্ষেত্রে এবং স্বীকারোক্তিতে অন্য যাদের নাম এসেছে তাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হতে কোনো বাধা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘মামলায় ৬ জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। যার দ্বারা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে যে দুই আসামি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। কিন্তু এ বিষয়টি আসামি কিংবা তাদের পরিবার দাবি করলে হবে না। তারা ওই ধরনের কোনো নথি বা সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পারেননি, যা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে।’

দালিলিক সাক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন। সেখানে আঘাতের ফলে যে আবরারের মৃত্যু হয়েছে, সেটা এসেছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এসে মৌখিক সাক্ষ্যের মাধ্যমে প্রতিবেদনের সত্যতা প্রমাণ করেছেন। আর ছাত্রদের মৌখিক সাক্ষ্যে এবং ৮ আসামির স্বীকারোক্তি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনকে সমর্থন করেছে। এ ছাড়া পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য হিসেবে রয়েছেÑ আবরার বুয়েটের ছাত্র ছিলেন; আসামিরা তাকে ঘটনার কয়েকদিন আগে থেকে খোঁজ করে; ঘটনার সময় ও আগে-পরের ভিডিও ফুটেজে আসামিদের উপস্থিতি সবাই প্রমাণ হয়েছে।

সুপ্রিমকোর্টের এ ফৌজদারি আইনজীবী বলেন, ‘আদালত বিশ্বাসযোগ্য একজন সাক্ষী বা সারকমান্সটানশিয়াল এভিডেন্সের ওপর ভিত্তি করেই আসামিদের দণ্ড দিতে পারেন। সেখানে এ মামলায় সব ধরনের বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা মনে করি, সব আসামিই সর্বোচ্চ দণ্ডের আওতায় আশা উচিত।’

অন্যদিকে আসামি ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন ও মুনতাসির আল জেমির আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো জানান, মামলায় বলা হচ্ছে যে আবরারকে পিটিয়ে স্টাম্প ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিন্তু কোনো সাক্ষী বলেননি যে আবরার মারার সময় চিৎকার করেছিল বা কেউ তার চিৎকার শুনেছেন। এতে প্রমাণ হয় যে আসামিরা কেউ তাকে মারেনি। অন্য কোথাও থেকে কেউ তাকে মেরে সিঁড়ির ওখানে রেখে গেছেন।

তিনি আরও বলেন, তার মক্কেলদের মধ্যে সকাল ও রবিনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রয়েছে, যা রিমান্ডে নিয়ে ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয়েছে। আইনজীবী টিটো আরও দাবি করেন, তার মক্কেলরা জড়িত থাকলে তারা হল ছেড়ে পালিয়ে যেতেন। চিকিৎসক আনতে বলতেন না, প্রাধ্যক্ষকে ফোন করে জানাতেন না। অ্যাম্বুলেন্স খবর দিতেন না। তিনি বলেন, ‘মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করা হয়েছে। মামলায় বুয়েট উপাচার্যকে সাক্ষী করা হয়নি। প্রাধ্যক্ষ সাক্ষী থাকলেও তাকে সাক্ষ্য দিতে আদালতে আনা হয়নি। যে ১০-১২ জন ছাত্র মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের আবরার নিহত হওয়ার পর বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে হাইকোর্টে রিট করে তারা ছাত্রত্ব ফিরে পেয়েছেন। তারা নিজেরাই তো কালপ্রিট। তাই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।’

উল্লেখ্য, ঘটনার পরদিন নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। মামলাটি পরে ডিবিতে হস্তান্তর হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com