সিলেট চেম্বারের নতুন কমিটি নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি। নির্বাচন বোর্ডের বৈঠক চলাকালে পালটাপালটি দুই পক্ষ মহড়া দেওয়ার পর রাত যত গভীর হয় উত্তেজনা ততই বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেম্বার ভবনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এরপর সোমবার গভীর রাতে তাহমিন আহমদকে সভাপতি, ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদকে সিনিয়র সহসভাপতি ও আতিক হোসেনকে সহসভাপতি পদে বিজয়ী হিসাবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
তারা সবাই চেম্বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের প্রার্থী। এর আগে প্রেসিডিয়াম গঠন নিয়ে সোমবার বিকাল থেকে উত্তেজনা দেখা দেয় চেম্বার ভবনে। নির্বাচন বোর্ডের কাছে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তাহমিন আহমদ একটি অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ নির্বাচনে দুই শ্রেণি থেকে নির্বাচিত হয়ে প্রেসিডিয়ামের তিনটি পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে সভাপতি পদে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে নির্বাচিত অর্ডিনারি শ্রেণির প্রার্থী আব্দুর রহমান জামিল, সিনিয়র সহসভাপতি পদে জিয়াউল হক জিয়া ও সহসভাপতি পদে হুমায়ুন আহমদ মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়। নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড তাহমিন আহমদের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে চেম্বারের সংঘবিধির ১২ (বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আব্দুর রহমান জামিল ও হুমায়ুন আহমদের প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়। মুহূর্তের মধ্যেই পালটে যায় পরিস্থিতি।
নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড সভাপতি পদে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তাহমিন আহমদকে সভাপতি ও আতিক হোসেনকে সহসভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে। পাশাপাশি একই প্যানেল থেকে সিনিয়র সহসভাপতি পদে ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ বিজয়ী হন। এরপর সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ এই প্রেসিডিয়াম নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক ও একেপেশে আচরণের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। প্রেসিডিয়াম নির্বাচন বর্জনকারীরা মঙ্গলবার এক সংংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, আপিল বোর্ডে সমাধান না হলে তারা আইনি পদক্ষেপে যাবেন। ব্যবসায়ী পরিষদের বাতিল হওয়া দুই প্রার্থীর প্রার্থিতা বহাল রাখার দাবিতে আপিল বোর্ডের কাছে আবেদন করবে ব্যবসায়ী পরিষদ।
বিষয়টি আপিল বোর্ডে সমাধান না হলে আইনি লড়াইয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেট চেম্বারের সভাপতি প্রার্থী আব্দুর রহমান জামিল। তার বক্তব্যে বলা হয়, প্রেসিডিয়াম নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রুপের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে প্রেসিডিয়াম গঠন হল কি না তা কারও পক্ষে বোঝার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় নির্বাচনি বোর্ড কিসের ভিত্তিতে দুটি মনোনয়ন বাতিল করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। এমন অযৌক্তিক, অন্যায় ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে একতরফাভাবে কোনো কিছুই বিবেচনা না করেই অদৃশ্য কারণে তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে বলে দাবি করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নবনির্বাচিত পরিচালক আলীমুল এহসান চৌধুরী, জহিরুল কবির চৌধুরী শিরু, হুমায়ুন আহমদ, আব্দুস সামাদ তুহেল, জিয়াউল হক জিয়া, দেবাংশু দাস মিঠু।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাচন শনিবার অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুই প্যানেল-সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ ও সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে ১১ জন করে পরিচালক নির্বাচিত হন। পরিচালকদের ভোটে সোমবার বিকালে চেম্বারের সভাপতি ও দুই সহসভাপতি নির্বাচিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে। সূত্র জানায়, দুই প্যানেল থেকেই সমান সংখ্যক পরিচালক নির্বাচিত হওয়ায় সভাপতি ও দুই সহসভাপতি নির্বাচন নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এই জটিলতা নিরসনে দুই প্যানেলকে নিয়েই রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের সদস্যরা। পরে গভীর রাতে কমিটির চেম্বার নেতাদের নাম ঘোষণা করে নির্বাচনি বোর্ড।
উল্লেখ্য, শনিবার অনুষ্ঠিত সিলেট চেম্বারের নির্বাচনে চার ক্যাটাগরির দুটির নির্বাচনে ৪০ প্রার্থীর মধ্যে পরিচালক পদে বিজয়ী হয়েছেন ১৮ জন। অপর দুই ক্যাটাগরিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪ পরিচালক বিজয়ী হন।
নির্বাচনে বিজয়ীরা হলেন-অর্ডিনারি শ্রেণি থেকে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, ফখর উছ সালেহীন নাহিয়ান, মুশফিক জায়গীরদার ও সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের হুমায়ূন আহমদ, জহিরুল কবির চৌধুরী, ফাহিম আহমদ চৌধুরী, খন্দকার ইসরার আহমদ রকী, আলীমুল এহছান চৌধুরী, মো. আব্দুস সামাদ, দেবাংশু দাস মিঠু, মো. নজরুল ইসলাম ও আব্দুর রহমান জামিল বিজয়ী হন। অ্যাসোসিয়েট শ্রেণি থেকে বিজয়ী হন সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তাহমিন আহমদ, মুজিবুর রহমান মন্টু, ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী রাজিব ও কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের জিয়াউল হক ও হাজী সরোয়ার হোসেন ছেদু।
অপরদিকে পরিচালক প্রার্থীদের মধ্যে ট্রেড গ্রুপ শ্রেণিতে ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণিতে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তারা হলেন-ট্রেড গ্রুপ শ্রেণিতে বিদায়ি সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব, মো. হিজকিল গুলজার ও মো. আতিক হোসেন। টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণিতে আমিনুর রহমান। এ দুই ক্যাটাগরিতে চারটি পরিচালক পদে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের কোনো প্রার্থী ছিল না।