সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন

ডায়াবেটিক রোগী ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে যা করবেন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১৭২ বার

দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা দুর্বল করে দেয় ডায়াবেটিস। ফলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা কমে যায়। ডায়াবেটিক রোগীকে ওমিক্রন সংক্রমণ বিষয়ে সতর্ক থাকতেই হবে।

জটিলতা কী : ডায়াবেটিক রোগীরা করোনায় আক্রান্ত হলে জটিলতা কিছুটা বাড়ে এবং উপসর্গগুলো হয় মারাত্মক ধরনের। হাসপাতালে ভর্তি হলে তাদের দীর্ঘ সময় থাকতে হয়। তাদের অক্সিজেনের ঘাটতি বেশি হয়। অনেকের হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ আনুষঙ্গিক আরও ব্যাধি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে রক্তনালি সরু হয়ে যায়। ডায়াবেটিক রোগীর রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেশি থাকে। কভিড ১৯ এ প্রবণতা আরও উসকে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য রোগীর চেয়ে ডায়াবেটিক রোগীর কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের সাহায্য লাগে বেশি। নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনও বেশি পড়ে। এসব কারণে তাদের কভিডজনিত মারাত্মক জটিলতা ও মৃত্যু তুলনামূলক বেশি।

লাগামহীন চিনির মাত্রা : কভিড ১৯ সংক্রমণ শরীর ও মনের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। শারীরিক ও মানসিক এ চাপে রক্তে হু-হু করে বেড়ে যায় স্ট্রেস হরমোন, যার নাম কর্টিসল। এটি চিনির মাত্রা বৃদ্ধির নেপথ্যে কাজ করে। এ ছাড়া ভাইরাসসৃষ্ট রাসায়নিক ঝড় শরীর এলোমেলো করে দেয়। চিকিৎসকরা একে বলেন সাইটোকাইন স্টর্ম। এসব রাসায়নিক উপাদান বাড়িয়ে দেয় চিনির মাত্রা। করোনা সংক্রমণের সময় স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করায় ডায়াবেটিস হয়ে পড়ে আরও নিয়ন্ত্রণহীন। স্বাভাবিক কারণেই রোগে শয্যাশায়ী মানুষটির শারীরিক কসরত বন্ধ থাকে। ইনসুলিন হয়ে পড়ে অকার্যকর। খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ তখন শিথিল হয়ে যায়। রোগীর মনে দানা বাঁধে ভয়-ভীতি, অজানা আতঙ্ক। এগুলো সবই চিনির মাত্রা বৃদ্ধির নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। সার্বিক পরিস্থিতিতে অনেকে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা বন্ধ রাখে বা অপর্যাপ্ত ওষুধ গ্রহণ করে। সব মিলিয়ে রক্তে চিনির পরিমাণ তখন অনেক বেশিই থাকে।

করণীয় : অনিয়ন্ত্রিত চিনির মাত্রা কভিডের জটিলতা বৃদ্ধি করে। তাই করোনার এ সময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি। খাদ্যতালিকায় এ সময় মিষ্টি ফল কোনোভাবেই যোগ করা যাবে না। ডায়াবেটিক ডায়েটের দিকে জোর নজর রাখতে হবে। কভিডের কারণে অনেক ওষুধ বদলে ফেলতে হয়। যেমন- মেটফরমিন। এ সময় রোগীর ল্যাকটিক এসিড নামের এক ধরনের এসিডের উৎপাদন বাড়িয়ে জটিল পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, তাদের এমন হওয়ার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। রক্তে এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা এলোমেলো হয়ে পড়ে। সালফোনাইল ইউরিয়া গ্রুপের ওষুধও গ্লুকোজ কমিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া তৈরি করতে পারে, যা ডেকে আনতে পারে চরম বিপত্তি। আরেক ধরনের ওষুধ ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিস নামের মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং এ সময় ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলোর দিকে নজর দেওয়া খুব জরুরি। এ সময় ইনসুলিনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ।

তবে অবশ্যই রক্তের চিনির মাত্রা নিয়মিত তদারকি করে ইনসুলিনের ডোজ ঠিক রাখতে হবে। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ রক্তের চিনির মাত্রা বল্গাহীন করে দেয়। এ সময় রোগীর চিকিৎসায় এই ওষুধের বিশেষ প্রয়োজন পড়ে। তবে যথেচ্ছ ব্যবহার যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাড়িতে করোনার চিকিৎসা নেওয়ার সময় নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরখ করতে প্রয়োজনীয় স্ট্রিপ মজুদ রাখুন। কিডনি বা চোখের অসুখ, পায়ের ক্ষত থাকলে বাড়তি তদারকি করুন। গর্ভবতী নারীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আরও যত্নশীল হোন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না, নিজেও পরিবারের অধিকতর যত্নবান হোন।

লেখক : ক্ল্যাসিফায়েড মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com