আজ বিশ^ নারী দিবস। এ দিবসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আয়োজন করে থাকে বিভিন্ন সংগঠন। পাশাপাশি শোবিজে যেসব নারী সফলতার সঙ্গে পথ চলছেন তাদেরই থাকে নানা প্রতিবন্ধকতা। কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে সফল হওয়া কয়েকজন তারকা জানিয়েছেন নারী দিবসের ভাবনা। লিখেছেন- ফয়সাল আহমেদ
ববিতা
নারীদের স্বাধীনতা নিয়ে, নারী মুক্তি নিয়ে শুধু নারী দিবসেই নয়, বছরজুড়ে নানান আলোচনায় উঠে আসে। কিন্তু আদৌ কী নারীরা সত্যিকার অর্থে এই দেশে স্বাধীনতা পেয়েছে? হ্যাঁ, এটা সত্যি আগের চেয়ে নারীদের জীবনে পরিবর্তন এসেছে। সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীরা চাকরি করছে। নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু শতকরা হিসেবে সেটা কতটুকু? এখনো কোনো নারী বিধবা হলে সে কী তার বাবা মায়ের কাছে ফিরে যেতে পারে? শ^শুরবাড়ির লোকজন কী আপন ভেবে নিজেদের কাছে নিজের মেয়ের মতো করে কিংবা বোনের মতো করে রেখে দিতে পারেন? পারেন না।
সে ক্ষেত্রে একজন নারীর জীবন অনিশ্চয়তার দিকে চলে যায়। কখনো কখনো সেই নারী আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে বাধ্য হন। যদি তাই হয় তাহলে আদৌ কী নারী স্বাধীন হতে পেরেছে? এখনো আমাদের দেশে বলা যায় প্রায় সময়ই ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশেরই কোনো বিচার হচ্ছে না। তাতে অপরাধীরা আরও অপরাধ করার সাহস পেয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থা থেকে আমাদের দ্রুত উত্তরণ ঘটাতে হবে। নারীরাও দেশের গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তাদের যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে। নারীদের কিছু কিছু ব্যতিক্রম সফলতা বা সাহসীকতাই সামগ্রিক চিত্র নয়। আমি মনে করি নারীদের সাহসিকতার সঙ্গে যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তাতে রাষ্ট্র যেন তাকে পূর্ণ সহযোগিতা করে। তাতেই নারী মুক্তি মিলবে, নারীর স্বাধীনতা মিলবে।
মৌসুমী
সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি খুললেই দেখা যায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণের মতো হৃদয়বিদারক সংবাদ। আফসোস যে নারী জাতি এত কষ্ট করে জন্ম দেন একটি ফুটফুটে বাচ্চা, আলো দেখান এই সুন্দর পৃথিবীর, আজ তারাই নিরাপদভাবে চলাফেরা করতে পারে না। সবার উচিত শুধু নারী দিবসে নারীদের সম্মান না করে নারীরা যেন স্বাধীনভাবে স্বাধীন দেশের সুনাগরিক হয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে, সে ব্যবস্থা করা।
মেহজাবীন চৌধুরী
অনেকেই বলেন, নারী দিবস পালন করা ঠিক নয় বা এটা হওয়া উচিত নয়। কিন্তু আমার মনে হয়, প্রতিটি বিষয়ের একটা উদযাপন তো হওয়া দরকার। আমার তো মনে হয়, প্রতিবছর নারী দিবস পালন করা উচিত। এটি আরও জাঁকজমকপূর্ণ হওয়া উচিত। আসলে নারীদের উচিত, নিজেরাই নিজেদের উৎসাহিত করা। নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রধান শর্ত নয়। আমি মনে করি, একটি মেয়ে কিন্তু একজন মা। আমি সন্তান জন্ম দিতে পারি। আমার হাতে অনেক কিছুই আছে, বলতে গেলে আমার হাতে পুরো জাতি। এই বিশ্বাস যদি নিজেদের মধ্যে থাকে, তা হলে নারীরা অনেকখানি এগিয়ে যাবেন।
তানজিন তিশা
আমি মনে করি, নারী ও পুরুষ আলাদা সত্তা নয়, সবাই মানুষ। তার পরও একজন নারীর জীবনে প্রতিবন্ধকতার সীমা নেই। সামাজিক অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজের অধিকার থেকে এখনো বঞ্চিত। এ অবস্থা থেকে নারীকে নিজ চেষ্টায় সব বাধা অতিক্রম করে সাফল্য অর্জন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি দিনই সংগ্রামের। তাই নারী দিবস উদযাপনের পাশাপাশি নারীর এগিয়ে যাওয়ার সংগ্রাম যেন অব্যাহত থাকে, এ কামনা করি।
আজমেরি হক বাঁধন
বলেন, আমার কাছে নারী দিবস বছরের একদিন নয়, প্রতিদিনই হওয়া উচিত। প্রত্যেক দিনই নারীকে সচেতন হতে হবে, দেখতে হবে সে তার নিজের অধিকারগুলো ঠিকমতো পাচ্ছে কিনা। আর এই চর্চাটা শুরু হবে ঘর থেকে। সম্মান করতে হবে মা, বোন, ভাবি, শাশুড়িসহ ঘরের সব নারী সদস্যকে। তখনই নারী দিবসের আসল তাৎপর্য আসবে বলে মনে করি।
বিদ্যা সিনহা মিম
অর্থনীতি, রাজনীতি, খেলাধুলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিকিৎসা, নারী কোথায় নেই বলুন তো? শুধু উন্নয়নে নয়, দুর্যোগেও নারী আমাদের আগলে রেখেছে। করোনা মহামারীতেও কত নারী সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন আমাদের জন্য। এই নারীকে কি আমরা সুন্দর, সম্মানজনক, স্বাভাবিক জীবন দিতে পারছি? আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমি বিদ্যা সিনহা মিম রুখে দাঁড়িয়েছি নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে। আপনি আছেন তো আমাদের সঙ্গে?