শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৩ পূর্বাহ্ন

দুর্নীতি রুখতে হবে এখনই অন্যথায় অর্জন টেকসই হবে না

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২০
  • ৩৭৫ বার

দুর্নীতি আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। এই কথাটা বহু বছর ধরে বহুভাবে আমরা উচ্চারণ করছি। কিন্তু গত এক দশকে এর যে ভয়াবহ ব্যাপকতা দেখা যাচ্ছে, তাতে কথাটা আর যুতসই মনে হচ্ছে না। এখন মনে হয়, নতুন কোনো অভিধা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। দেশের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দুর্নীতিই যেন একমাত্র নীতিতে পরিণত হয়েছে। সততা, সুনীতি, নৈতিকতাÑ এসব শব্দ সমাজ থেকে উৎপাটিত হয়ে নিছক অভিধানে জায়গা করে নিয়েছে।
সরকারের বা প্রশাসনের এমন কোনো খাত নেই যেখানে ‘হরিলুটের মচ্ছব’ চলছে না। এমনকি, কথিত সিন্ডিকেট তৈরি করে যথেচ্ছ লুটপাট করা হচ্ছে জনগণের অর্থ। কেনাকাটার নামে বাড়তি ব্যয় দেখানো, প্রকল্পের আড়ালে অপ্রয়োজনীয় ও ব্যয়বহুল বিদেশ ভ্রমণ, বিদেশী পরামর্শক খাতে অভাবিত পরিমাণে অর্থ ব্যয়, নি¤œমানের কাজ করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়া ইত্যাদি অনেকটা স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে।
পুকুর খননের প্রায়োগিক কৌশল জানতে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের উদ্ভট প্রস্তাব এ ক্ষেত্রে কিংবদন্তিতুল্য ঘটনা হয়ে আছে। ভবন ও সড়ক নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহার এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত দেশবাসীর সামনে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশকাণ্ড জাতীয়পর্যায়ে সর্বকালের ‘সেরা দুর্নীতি’র রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সেখানে প্রতিটি বালিশের পেছনে ব্যয় করা হয় ছয় হাজার ৭১৭ টাকা। এর মধ্যে দাম বাবদ পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা আর প্রতিটি বালিশ নিচ থেকে ফ্ল্যাটে উঠাতে ৭৬০ টাকা খরচ উল্লেখ করা হয়েছে। একটি বৈদ্যুতিক চুলা কেনা হলো সাত হাজার ৭৪৭ টাকায় আর তা ফ্ল্যাটে তুলতে ব্যয় হয়েছে ছয় হাজার ৬৫০ টাকা! একটি ইলেকট্রিক কেটলির দাম ছিল পাঁচ হাজার ৩১৩ টাকা এবং তা ফ্ল্যাটে নিতে লাগে দুই হাজার ৯৪৫ টাকা। একইভাবে একটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের দাম দেখানো হয় ১২ হাজার ১৮ টাকা এবং ফ্ল্যাটে উঠাতে ছয় হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয় হয়েছে। এ ছাড়া ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের ‘পর্দা কাহিনী’ মানুষ কখনো ভুলবে বলে মনে হয় না। পুলিশের ডিআইজি মিজান এবং ঊর্ধ্বতন এক দুদক কর্মকর্তার দুর্নীতির খবর বাংলাদেশে ‘দুর্নীতির সেরা দৃষ্টান্ত হিসেবে’ গণ্য হতে পারে। এভাবে দুর্নীতির অসংখ্য দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যায় । কিন্তু এগুলোই এখন বাংলাদেশের স্বাভাবিক চিত্র।
সর্বশেষ দেখা গেল, ১০ তলা ভবন তৈরির জন্য নাকি বিদেশী জ্ঞান আহরণ করতে হবে। আর এ জন্য ৩০ জন কর্মকর্তার বিদেশ যাওয়া ‘একান্ত জরুরি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি জাতীয় দৈনিকে এ বিষয়ে এক রিপোর্টে বলা হয়, ঢাকায় একটি বহুতল ভবন নির্মাণের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে বিদেশ সফরে যাবেন ৩০ কর্মকর্তা। প্রত্যেকের বিদেশ সফরের পেছনে তিন লাখ ৩৩ হাজার টাকা করে ব্যয় হবে। এ ক্ষেত্রে তিন কোটি টাকা ব্যয় হবে। এ ছাড়া ১০ তলা ভবন নির্মাণে বিদেশী পরামর্শক নিয়োগে বিবিধ ব্যয়সহ ২৮ কোটি ২২ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ‘গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের বহুতল ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পে এ চিত্র দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের একজন পরিচালক দৈনিকটিকে জানান, এগুলো বিশেষ ধরনের (স্পেশাল টাইপ) ভবন হবে। ফলে পিডব্লিউডির পাশাপাশি বিদেশী বিশেষজ্ঞ পরামর্শকের প্রয়োজন। এ ধরনের ভবন বিশ্বের কোথায় আছে, সেগুলো দেখারও প্রয়োজন রয়েছে। সুতরাং বিদেশ সফরের জন্য যে বরাদ্দ ধরা হয়েছে, সেটি অপ্রয়োজনীয় নয়। ভবনগুলো কেন ‘বিশেষ’Ñ এমন প্রশ্নের সদুত্তর কিন্তু পাওয়া যায়নি।
এমতাবস্থায় এটি একটি উদাহরণমাত্র। প্রতিদিন সরকারের বিভিন্ন দফতর, অধিদফতর, মন্ত্রণালয়ের কত কর্মকর্তা কত তুচ্ছ কাজের অজুহাতে বউ-বাচ্চা, পিওন চাপরাশি নিয়ে বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন তার হিসাব এ দেশে কেউ রাখে না। সরকারের দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম যে মুখের বুলিতেই সীমাবদ্ধ, এসব উদাহরণ থেকেই তা স্পষ্ট। কিন্তু দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া এই দেশ ও জাতির কোনো অর্জনই যে টেকসই হবে না, তা সরকারকে কে বোঝাবে?

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com