শহর বা গ্রামের মাঠপর্যায়ে ৯৮৮ শাখায় বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশের ৩০ বাণিজ্যিক ব্যাংক। আবেদনের সর্বশেষ দিনে গতকাল ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের এ প্রস্তাব বিবেচনায় নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ দিকে ডলার সঙ্কটে আন্তঃব্যাংক লেনদেন করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। যাদের সঙ্কট রয়েছে তারা পড়েছে বিপাকে। এক দিকে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় বেশি দামে নগদ ডলার কিনতে পারছে না, আবার বাড়তি মূল্যে সংগ্রহ করতে পারছে না রেমিট্যান্স। সব মিলেই একশ্রেণীর ব্যাংক কঠিন সমস্যায় পড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকালও রিজার্ভ থেকে ছয় কোটি ৭০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাধারণ গ্রাহক ব্যাংকের বাইরে মানি চেঞ্জারের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকে। বেশির ভাগ সময় মানি চেঞ্জারগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে কম দামে ডলার কিনে বেশি দামে বিক্রি করার অভিযোগ ওঠে। আর ব্যাংকে যখন ডলার সঙ্কট থাকে তখন বাজার অস্থিতিশীল করতে মানি চেঞ্জারগুলো নানা রকম ভূমিকা রাখে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুসন্ধানে এমন অনিয়মের চিত্র পাওয়া গেছে। বাজার কারসাজির মাধ্যমে প্রতি ডলার ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে তারা। এর ফলে প্রায় অর্ধশত মানি চেঞ্জারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মানি চেঞ্জারগুলোর ওপর সাধারণ গ্রাহকদের নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মাঠপর্যায়ে ব্যাংকের শাখায় ডলার কেনাবেচা অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আগ্রহী ব্যাংকগুলোর কাছে শাখার তালিকা চাওয়া হয়। ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক শাখার তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রদান করে। গতকাল সোমবার ছিল তালিকা পাঠানোর শেষ দিন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, গতকাল পর্যন্ত যেসব আবেদন পড়েছে সেসব আবেদন এখন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। শিগগিরই তাদেরকে বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার জন্য অনুমোদন দেয়া হবে।
এ দিকে ব্যাংকগুলোর ডলার সঙ্কট মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে গত ৫১ দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১৯২ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
ব্যাংকাররা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে শুধু জ্বালানি তেল, সারসহ সরকারি কেনাকাটার জন্য সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে পণ্য আমদানিতে ডলার সরবরাহ করতে ব্যাংকগুলো পড়েছে বেকায়দায়। একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক নয়া দিগন্তকে জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি হেড অপসারণ এবং এমডিদের শোকজ করার পর অন্য ব্যাংকগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তারা এখন নিজেদের প্রয়োজনে ডলার সংগ্রহ করছে। প্রয়োজনের বাড়তি যেটুকু থাকছে তা ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিচ্ছে। কিন্তু আন্তঃব্যাংকে লেনদেন করছে না। এতে বিপাকে পড়েছে সত্যিকারের সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো। তারা না পারছে আন্তঃব্যাংক থেকে ডলার সংগ্রহ করতে, না পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সহযোগিতা। এমনি পরিস্থিতিতে পণ্য আমদানি এলসির দেনা শোধ করতে পারছে না। এ দিকে রফতানিকারকরাও ডলারের বেশি দাম চাচ্ছে। সব মিলেই মহাবিপাকে পড়েছে ব্যাংকগুলো।