রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৯ পূর্বাহ্ন

রিজওয়ানের ব্যাটিং ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাকিস্তানের হারের ৫ কারণ

স্পোর্টস ডেস্ক ‍॥
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৭৪ বার

২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপ জিতে নিলো শ্রীলঙ্কা। পাকিস্তান ফাইনালে ২৩ রানে হেরে গেছে। শুরুতে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা ১৭০ রান তোলে, জবাবে পাকিস্তান ১৪৭ রানে অলআউট হয়ে যায় ২০ ওভার ব্যাট করে।

এই ম্যাচের পর সবাই আর্থিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটে থাকা শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দলটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হারশা ভোগলে নিজের ভেরিফাইড টুইটারে লিখেছেন, ‘শ্রীলঙ্কায় আরো অনেক আনন্দের উপলক্ষ আসুক।’

পাকিস্তানের সাবেক তারকা ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার এখন ইউটিউবে ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেন। তার মতে, পাকিস্তানের সমন্বয়টা ঠিকঠাক কাজ করছে না। অনেক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলছেন তিনি। ফখর, খুশদিল, ইফতিখার সবারই নিজেদের নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন পাকিস্তানের সাবেক এই বোলার।

তবে শোয়েব আখতার আলাদাভাবে কথা বলেন রিজওয়ানের ব্যাটিং নিয়ে, ‘৫০ বলে ৫০! এটা এখন আর কাজ করবে না। পাকিস্তানের কোনো ফায়দা হলো না।’

মোহাম্মদ রিজওয়ান ৪৯ বলে ৫৫ রানের একটি ইনিংস খেলে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
ক্রিকেট বিশ্লেষক হারশা ভোগলে টুইট করে বলছেন, পাকিস্তানের মিডল অর্ডারে সমস্যা আছে। আরো সমস্যা হলো, আপনি যখন ১৭০ রান তাড়া করছেন তখন আপনি ৪৯ বলে ৫৫ করতে পারেন না।

মোহাম্মদ রিজওয়ান টুর্নামেন্টের সেরা রান সংগ্রাহক, তিনি ৬ ম্যাচে ২৮১ রান তুলেছেন কিন্তু তার স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ১১৭ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন রিজওয়ান। যেখানে শ্রীলঙ্কার ভানুকা রাজাপাকশা ১৪৯ ও কুশল মেন্ডিস ১৫৬ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৪০ বলে ৫০ করার চেয়ে ১ বলে ০ করে আউট হয়ে যাওয়াও অনেক সময় ভালো বলে মনে করেন ক্রিকেট পরিসংখ্যানবিদ মাজহার আরশাদ।

শোয়েব আখতার টুইটারে লিখেছেন, বাবরের জন্য দুঃস্বপ্নের একটা টুর্নামেন্ট শেষ হলো। ফখর জামানের জন্যও।

পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপের টপ অর্ডার নির্ভার, মানে অনেক ম্যাচেই টপ অর্ডার ম্যাচ জিতিয়েছে, কিন্তু এই টপ অর্ডারও যে দুর্বলতার কারণ হতে পারে সেটা নিয়ে বিবিসি বাংলায় টুর্নামেন্টের আগে বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল। ঠিক সেটাই যেন প্রতিফলিত হলো মাঠের খেলায়।

বাবর আজম ৬ ম্যাচে ৬৮ রান তুলেছেন ১১ দশমিক ৩৩ গড়ে। ফখর জামান ৬ ম্যাচে করেছেন ৯৬ রান, গত রাতে গোল্ডেন ডাক, অর্থাৎ প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন তিনি।

এই টুর্নামেন্টে টস একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমন মনে হচ্ছিল, যে দল টসে জিতে বোলিং নেবে তারাই শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতে নেবে। শ্রীলঙ্কা ফাইনালে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে, ম্যাচ শেষে দাসুন শানাকা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের উদাহরণ টানেন।

তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের আইপিএল দেখেন তারা ফাইনালে জিতেছে শুরুতে ব্যাট করে। আমরা পাঁচ উইকেট চলে যাওয়ার পরে দমে যাইনি। রাজাপাকশা ও হাসারাঙ্গা দারুণ ব্যাট করেছেন। বোলারদের কেবল বলেছি চাপ না নিতে। আমি জানতাম তরুণ বোলাররা ভালো করবে।’

ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ বোরিয়া মজুমদারও নিজের বিশ্লেষণে বলেছেন, ‘টসে হারের পর একটা দলের মনোবল নষ্ট হয়ে যায় এসব খেলায়। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ছিল অদম্য।’

দুবাই স্পোর্টস সিটিতে এই ম্যাচের আগে ২১টি ম্যাচের মধ্যে ১৮টিতেই রান তাড়া করা দল ম্যাচ জিতেছে।

ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার পেয়েছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। তিনি এমন এক সময় ব্যাট করতে নেমেছিলেন যখন দল বিপর্যস্ত এবং ব্যাটিং নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। তখন ২১ বলে ৩৬ রানের একটি ইনিংস খেলে ম্যাচে মোমেন্টাম ফেরান হাসারাঙ্গা।

এরপর বল হাতে শুরুর দুই ওভার খানিকটা ভুগলেও, তিনি শেষ ২ ওভারে ৩টি উইকেট নিয়েছেন। ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি।

৪৫ বলে অপরাজিত ৭১ রানের ইনিংস- ভানুকা রাজাপাকশা যখন মাঠে নামেন ৩৬ রানে তিন উইকেট চলে গিয়েছিল। সেই অবস্থান থেকে শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ড সচল রাখার কাজটা করেছেন রাজাপাকশা।

তিনি ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন। ছয়টি চার ও ৩ ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি ৪৫ বলের ইনিংসে। অর্থাৎ প্রতি ৫ বলে একটি চার বা ছয় হাঁকিয়েছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।

পাকিস্তানের ফিল্ডাররা প্রচুর সুযোগ নষ্ট করেছে, যেগুলো ধরলে শ্রীলঙ্কা হয়তো এতো রান করতে পারতো না। সেক্ষেত্র চাপ খানিকটা হলেও কম হতো।

বিশেষত শাদাব খান আপাত দৃষ্টিতে সহজ একটি ক্যাচ ছেড়েছেন। আরেকটিতে তিনিও চেষ্টা করতে গিয়ে সতীর্থের সাথে ধাক্কা লেগে বল বাউন্ডারি পার করেছিল।

শোয়েব আখতার ম্যাচ দেখে টুইটারে লিখেন, ‘শাদাব আমাদের সেরা ফিল্ডার। কেবলই একটা খারাপ দিন যাচ্ছে। তবে কে ক্যাচ ধরবে সেটা নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। এই টুর্নামেন্টেই বেশ কয়েকবার হলো এমন।’

নাসিম শাহ শ্রীলঙ্কার ইনিংসের শেষ ওভারটি করেছিলেন- রান এসেছিল ১৫। এর আগের ওভারের শেষ বলেই রাজাপাকশার বল ধরতে না পেরে ছয় বানিয়ে দেন পাকিস্তানের দুই ফিল্ডার। ঠিক তার আগের ওভারেও ভানুকা রাজাপাকশার ক্যাচ হাতছাড়া করেছিলেন শাদাব। তখন ভানুকা রাজাপাকশার রান ছিল ৪৬, শেষ পর্যন্ত তিনি ৭১ রান করেন।

দিনশেষে শ্রীলঙ্কার ষষ্ঠবারের মতো এশিয়া কাপ জয়ের পর বারবার আলোচিত হচ্ছে দেশটির এমন দুরবস্থার মধ্যে ক্রিকেট দলটির একতা ও আত্মবিশ্বাস।

একই সাথে পাকিস্তানের ক্রিকেটে ফুটে উঠছে ভিন্ন চিত্র। ম্যাচ শেষে পাকিস্তানের অলরাউন্ডার ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমরা কবে নিজেদের পছন্দ-অপছন্দের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো?’

এটা নতুন করে পাকিস্তানের ক্রিকেট দলটির মধ্যে বিতর্কের আভাস দিচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com