প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে মানসম্পন্ন শিক্ষার বিকল্প নেই। কিন্তু বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার মান এখন তলানিতে। এর বড় প্রমাণÑ সর্বশেষ প্রকাশিত বৈশ্বিক শিক্ষা সূচকে এ দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রথম এক হাজারের তালিকায়ও স্থান পায়নি। এমন অবস্থাতেও দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম খণ্ডকালীন শিক্ষকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। অস্থায়ী বা খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম। আগে প্রধানত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই প্রবণতা থাকলেও এখন অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশেষ করে নতুন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ এবং পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিভাগে শিক্ষক সঙ্কট থাকায় এই অবস্থা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এর পরও ছুটিতে যাচ্ছেন বহু শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে সরকারের অর্থে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৪৬টি। এমন আরো পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ শতাংশ শিক্ষক আছেন ছুটিতে। তাদের মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে আছেন ২১৩৩ জন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার স্বার্থেই শিক্ষকরা উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটি নেন, তবে বিদেশে গিয়ে অনেকে সময়মতো ফিরতে পারছেন না বা ফিরছেন না। ফলে খণ্ডকালীন বা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো খণ্ডকালীন শিক্ষকই সম্বল হয়ে উঠছে অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। নতুন-পুরনো সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই এই অবস্থা। ঢাকার বাইরে প্রতিষ্ঠিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সঙ্কটের মূল কারণ অবস্থানগত। যেখানেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হোক না কেন, বিজ্ঞপ্তি দিলে প্রভাষক পাওয়া যায়। কিন্তু ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষকের সঙ্কট বেশি। বিজ্ঞপ্তি দিয়েও অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে জুনিয়র শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। এ পরিস্থিতিতে একাডেমিক কার্যক্রম চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে।
খরচ যাতে না বাড়ে সে জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী শিক্ষক প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তাই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধিকাংশ খণ্ডকালীন শিক্ষক নেয়। তাদের অনেকে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো রকমে ক্লাস নিয়েই ক্যাম্পাসের বাইরে ছোটেন। এতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্য দিকে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। কারণ, স্থায়ী শিক্ষক যে দরদ দিয়ে পড়াবেন এবং যেভাবে প্রতিষ্ঠানের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি চাইবেন, সেটি খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে সম্ভব নয়। অথচ দেখা যাচ্ছে, খণ্ডকালীন শিক্ষকের পেছনে যে অর্থ ব্যয় হয়, সেই অর্থে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করতে পারে। এতে ওই সব প্রতিষ্ঠান লাভবান হতে পারে। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। সম্প্রতি ঢাকার বাইরে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে, ওই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের চাহিদার একটি অংশও পূরণ করা হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সঙ্কট কাটছে না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে খণ্ডকালীন শিক্ষক সম্পর্কিত ধারণা জনমনে থাকলেও কয়েক বছর ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও চলছে একইভাবে। ইউজিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এক বছরেই ভাড়া করা শিক্ষক বেড়েছেন ৬১ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০১৭ সালে ৬৮০ জন খণ্ডকালীন বা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ছিলেন ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে পরের বছর এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৯৭-এ। খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলোও একই সমস্যায় জর্জরিত। তাই দেশের উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম চালানোর মানসিকতা পরিত্যাগ করা জরুরি। মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে আমরা মনে করি। তা না হলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে দেশের শিক্ষার্থীরা ছিটকে পড়বেন। এটি দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য কল্যাণকর নয়।
Like!! I blog frequently and I really thank you for your content. The article has truly peaked my interest.