মানিকগঞ্জে হাতে তৈরি পলো বিক্রি করে স্বচ্ছলতা পেয়েছে অর্ধশত পরিবার। পরম মমতায় পূর্ব পুরুষের ব্যবসা বাঁশ থেকে পলো তৈরি করে যাচ্ছেন মানিকগঞ্জের কৃঞপুর ইউনিয়নের চান্দরা গ্রামের অর্ধশত পরিবার।
বাবা মায়ের সাথে ছেলে মেয়ে সকলেই মিলেমিশে পলো তৈরি করছেন। প্রায় সকলেই পলো ব্যবসার সাথে জড়িত বলে এলাকাটি পলো পাড়া নামে পরিচিতি লাভ করেছে। সরেজমিনে দেখা যায় প্রায় সকল বাড়িতে পরিবারের লোকজন মিলেমিশে পলো তৈরি করছেন। কয়েকটি ধাপে পলো তৈরি হয়ে থাকে।
পলো তৈরির শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে চান্দরার পলো পাড়ার লোকজন। বাবা মায়ের সাথে ছেলে মেয়েরাও লেখাপড়ার সাথে পলো তৈরি করে বাবা মাকে সহযোগীতা করছেন। পলো ব্যবসায়ী আসলাম মিয়া বলেন পূর্ব পুরুষেরা এই পলো বিক্রি করেই সংসার চালাতো। আমিও ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। আমার এক ছেলে এক মেয়ে তারা লেখাপড়ার সাথে পলো তৈরি করে। বাড়ির সকলে মিলেমিশে কাজটি করছি। তিনি আরোও বলেন, এক সময় প্রতিটি বাড়িতেই পলো ব্যবহার হতো। মাছ ধরা, হাঁস মুরগি পালন,খাবার ঢেকে রাখা সহ বিভিন্ন কাজে পলো ছিল অতি প্রয়োজনীয় একটি সরঞ্জাম।
আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ জানান, আমার বড় মেয়ে সরকারি কলেজে ডিগ্রীতে পড়ে। ছোট মেয়ে নবম শ্রেণিতে, ছেলে পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে। সকলেই লেখাপড়ার সাথে আনন্দ উৎসাহ নিয়ে পলো তৈরি করছে। কেউ সংকোজ করে না। সকলে মিলে ভাল আছি। আব্দুল্লাহর বড় মেয়ে ফারজানা আক্তার দৃঢ়তার সাথে বলেন বাবার সাথে কাজে সহযোগীতা করি। এটা আমার গর্ব। পলো তৈরি একটি শিল্প এবং ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে হবে। দেশ ব্যাপী মানিকগঞ্জের পলোর ব্যপক চাহিদা রয়েছে। বেশির ভাগ পলো মহাজনরা এলাকায় এসে কিনে নিয়ে যায়। এ ছাড়া কালামপুর, সুয়াপুর,সাভার সহ বিভিন্ন পাইকারী বাজারে এসব পলো বিক্রি হয়ে থাকে। আকার ভেদে প্রতিটি পলো একশত টাকা থেকে একশত আশি টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। নির্বিচারে বাঁশ ধ্বংস করার কারনে বাঁশের আকাল দেখা দিয়েছে। এ জন্য দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে একটি পলো মাত্র ত্রিশ চল্লিশ টাকায় বিক্রি হতো বলে এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান।
দুই একজন ছাড়া পলো ব্যবসা করে সকলেই সফলতা পেয়েছে। পলো ব্যবসায়ী আশুমিয়ার স্ত্রী বেগম আক্তার বলেন, দিনরাত খেটে যাচ্ছি কিছুই করতে পারছি না। আমাদের সহযোগীতা দরকার। তিনি আরো বলেন বাঁশ, তার ও প্লাস্টিকের দাম বাড়ায় আগের মতো লাভ হচ্ছে না। তাদের দাবি এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।
কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিপ্লব হোসেন সেলিম বলেন হাতে তৈরি করা পলো বিক্রি করে সকলেই ভাল আছেন। কেও কখনো সাহায্যের জন্য আসেনি। তারপরেও এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।