নতুন বছরেও চিনি নিয়ে সংকট কাটছে না। মিল থেকে সরবরাহ না থাকায় ইতোমধ্যে খুচরা বাজার থেকে প্যাকেট চিনি এক প্রকার উধাও হয়ে গেছে। পাশাপাশি বাজারে খোলা চিনি পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত দামের চাইতে সর্বোচ্চ ১৮ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে ক্রেতাসাধারণের নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি কিনতে বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে।
গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই চিনির দাম বাড়তে থাকে। এর মধ্যে ডলার ও জ্বালানি সংকটের কারণে গত বছরের জুলাই-আগস্ট থেকে চিনির বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এ অবস্থয় গত সেপ্টেম্বরে সরকার প্রথমবারের মতো চিনির দাম বেঁধে দেয়। এরপর আরও দুই দফা দাম বাড়ায় সরকার।
সংকট কাটাতে বাজারে চালানো হয় অভিযান। এত কিছুর পরও বাজারে চিনির সংকট কাটেনি। সর্বশেষ নভেম্বরে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি প্যাকেট চিনি ১০৭ ও খোলা চিনি ১০২ টাকা নির্ধারণ করে। তবে বাজারে এই দামে চিনি নেই।
শুক্রবার রাজধানীর নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ও কেরানীগঞ্জের জিনজিরা বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরবরাহ না থাকায় এ দিন বাজারে প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হয়নি। দুই-এক দোকানে মিললেও তা খোলা চিনি বানিয়ে বিক্রি করেছে। আর বাজারে প্রতিকেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ১১৫-১২০ টাকা, যা সরকার নির্ধারিত দামের চাইতে ১৩-১৮ টাকা বেশি।
জিঞ্জিরা কাঁচাবাজারের মুদি বিক্রেতা মো. সাক্কুর আলম যুগান্তরকে বলেন, নতুন বছরেও বাজারে চিনির সংকট কাটেনি। মিল মালিকরা দুই দফায় জিনির দাম বাড়িয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাশ করালেও বাজারে সেই দরে চিনি সরবরাহ করেনি। সরবরাহ করেছে বাড়তি দরে। নতুন করে দাম আরও বাড়াতে তারা পাঁয়তারা করছে। যে কারণে আমদানি করতে না পারার কথা বলা হচ্ছে। এই সুযোগে পরিবেশকরা সরবরাহ করছে না। মনে হচ্ছে আবারও নতুন করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে।
চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, ঋণপত্র খুলতে এখনো সমস্যা হচ্ছে। চিনির কাঁচামালের জোগান অব্যাহত রাখতে আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে আরও আন্তরিক হতে হবে। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই। কারণ সামনে রমজান মাস। এ সময় পণ্যের আমদানি বাড়িয়ে পণ্যের দাম কমাতে হবে।
সূত্র আরও জানায়, গত বছর অক্টোবর ও নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে অপরিশোধিত চিনি আমদানি ঋণপত্র উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। অক্টোবরে অপরিশোধিত চিনি আমদানি ঋণপত্র হয়েছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭৪৫ টন। নভেম্বরে আমদানি ঋণপত্র হয় ১ লাখ ৪২ হাজার ৩০২ টন। আর সর্বশেষ ডিসেম্বরে আমদানি ঋণপত্র হয়েছে মাত্র ৬৯ হাজার ৫২ টন।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাজারে পণ্যের যাতে কোনো ধরনের সংকট না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। পণ্য আমদানি করে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে। সে জন্য ঋণপত্র খোলা থেকে শুরু করে আমদানিতে কোনো প্রকার ভোগান্তি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। তদারকি জোরদার করতে হবে। যাতে কোনো অযুহাতে পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে। কারসাজি করে পণ্য বাজার থেকে উধাও করতে না পারে। আর এমন যারা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, ক্রেতার স্বার্থ রক্ষায় সব স্তরে তদারকি করা হবে। যাতে কোনো পণ্য নিয়ে কেউ কারসাজি করতে না পারে। এছাড়া চিনি নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। গত বছর আমরা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চিনির সব স্তরের ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা করেছি। এবারও তা করে একটি পদক্ষেপ নেব।