‘সমাজ পরিবর্তনে বহুভাষী-শিক্ষা প্রয়োজন’ স্লোগানে যুক্তরাষ্ট্রে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে জাতিসংঘের সদর দফতরে স্থানীয় সময় ২১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। একইদিন সকাল ১১ টায় ক্যালিফোর্নিয়ার পেরিস সিটিতে নির্মিত স্থায়ী শহীদ মিনারের উদ্বোধন করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এরপর স্থানীয় প্রবাসীরা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে ‘একুশ ফেব্রুয়ারি’কে স্বীকৃতি প্রদানের রেজ্যুলেশন গৃহীত হওয়ায় বহুজাতিক এই সিটিতে এবার গভীর শ্রদ্ধায় দিবসটি উদযাপিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এই রেজ্যুলেশন উত্থাপন এবং পাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ এবং আমান্দা ফারিয়াসসহ কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মাজেদা এ উদ্দিনকে সম্মান জানানো হবে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটও শহীদ দিবস উদযাপনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের সময়ের সাথে মিলিয়ে জাতিসংঘের সামনে দ্যাগ হ্যামারসল্ড পার্কে ২০ ফেব্রুয়ারি সোমবার বেলা ১ টায় মুক্তধারা ও বাঙালি চেতনামঞ্চের অস্থায়ী শহীদ মিনারে প্রবাসীরা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন। এ দিন দিবাগত রাত ১২ টা ১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল ১১ টায়) নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২৫টির মতো সংগঠন শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবে বলে জানিয়েছেন এ সংগঠনের সভাপতি মমতাজ শাহানা। এর আগে প্রভাতফেরীর আদলে জ্যাকসন হাইটসে সড়ক প্রদক্ষিণ করবেন প্রবাসীরা। একইসময়ে কুইন্স প্যালেসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাইয়ের নির্মিত শহীদ মিনারে অর্ধ শতাধিক সংগঠন, জ্যামাইকায় তাজমহল পার্টি হলে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মসূচিতে দুই ডজনের অধিক সংগঠন, বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মসূচি শুরু হবে অপরাহ্ন ৫ টায় উডসাইডে তিব্বতী কম্যুনিটি সেন্টারে। একুশের প্রথম প্রহরে শতাধিক সংগঠনের প্রভাতফেরীর মধ্যদিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হবে সেখানে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে।
এদিকে, মহান একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান দেশের সমৃদ্ধ ভাষা, সংস্কৃতি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান ভাষা আন্দোলনের সকল শহিদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে অমর একুশের চেতনা সমুন্নত রাখার জন্যও সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ও এর আশপাশের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘ডিসি একুশে অ্যালায়েন্স’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ফোরাম ইনক্ (ডুয়াফি)। ভাষা আন্দোলনের পটভূমি বর্ণনা করে রাষ্ট্রদূত ইমরান উল্লেখ করেন, এই আন্দোলন বাঙালিদের অন্যায় ও অসাম্যকে প্রশ্রয় না দিতে এবং দমন-পীড়নকারী শক্তির কাছে মাথা নত না করতে শেখায়। তিনি বলেন, অমর একুশের চেতনা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে অফুরন্ত প্রেরণা ও সাহস যুগিয়েছিল। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আর্লিংটন কাউন্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ক্রিশ্চিয়ান ডরসে। আর্লিংটন কাউন্টি বোর্ডের সদস্যরাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি অর্জনে বাংলাদেশের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে ডরসে বলেন, বাংলাদেশিরা ১৯৫২ সালে তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য লড়াই করেছিল ও জীবন দিয়েছিল-যা বিশ্বে বিরল।
এ উপলক্ষ্যে একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যার মধ্যে ছিল অমর একুশের ওপর ভিত্তি করে প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি শিল্পীদের পরিবেশনায় সমবেত সংগীত ও দলগত নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি এবং মঞ্চ নাটক। পরে রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা মঞ্চে স্থাপিত অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক ছিলেন ড. ইশরাত সুলতানা মিতা এবং যৌথভাবে এটি পরিচালনা করেন ড. আমিনুর রহমান ও ড. রুনা হক।