লড়াই করেও জিততে পারলো না বাংলাদেশ, চেপে ধরেও শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গেলো টাইগাররা। তবে বোলারদের যথাসাধ্য চেষ্টায় ইংল্যান্ড দলও বেশ ভুগেছে, তবে ডেভিড মালানের হার না মানা শতকে শেষ পর্যন্ত সব শঙ্কা দূর হয়েছে ইংলিশদের। তার ব্যাটে ভর করেই তিন উইকেটের জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড।
বুধবার প্রথম ওয়ানডেতে অবশ্য ২১০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই জেসন রয়ের উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। সাকিব আল হাসানের বলে তামিম ইকবালকে ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে ফেরেন রয়, মাত্র ৪ রান করেন তিনি। এরপর দৃশ্যপটে আসেন তাইজুল ইসলাম, জোড়া উইকেট শিকার করেন তিনি।
অধিনায়ক ভরসার প্রতিদান দিয়েছেন তাইজুল, ফিলিপ সল্ট ও জেমস ভিন্সকে ফেরান তিনি। প্রথমে ফিলিপ সল্টকে ১২ রানে বোল্ড করার পর জেমস ভিন্সকে ৬ রানে আউট করেন তাইজুল। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন মালান, সঙ্গী হিসেবে পান। অধিনায়ক জশ বাটলারকে।
তবে জশ বাটলারকে তাসকিন আহমেদ নাজমুল হোসেন শান্তের ক্যাচ বানালে বেশ ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। তবে পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে উইল জ্যাকস আর মইন আলিকে নিয়ে সমান ৩৮ রান করে যোগ করলে ফের ম্যাচের ভাগ্য দুল্যমান হয়ে উঠে। তাছাড়া ক্রিস ওকসে সাথে নিয়েও মালান যোগ করেন ২০ রান।
প্রথম দুটো জুটিই ভাঙেন মিরাজ, মইনকে ১৪ ও উইল জ্যাকসকে ২৬ রানে ফেরান তিনি। আর ক্রিস ওকসকে ফেরান তাইজুল, ৭ রান আসে তার ব্যাটে।
১৬১ রানেই ইংল্যান্ডের ৭ উইকেট তুলে নেন টাইগার বোলাররা। শেষ ৩ উইকেটে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন তখন ৪৯ রান। ফলে বাংলাদেশের দিকে সামান্য সম্ভাবনা দেখা দেয় আবারো।
তবে সংকট, সম্ভাবনা, শঙ্কা সব দূর করে দেন ডেভিড মালান। অষ্টম উইকেট জুটিতে আদিল রাশিদকে নিয়ে বাকি পথটা পাড়ি দেন মালান। দু’জনে মিলে আর কোনো সুযোগ না দিয়েই ৫৯ বলে হার না মানা ৫১ রানের জুটি গড়ে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। ৮ বল বাকি থাকতে ৩ উইকেটের জয় পায় ইংলিশরা।
এর আগে অবশ্য ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের চতুর্থ শতকটাও তুলে নেন ডেভিড মালান। প্রথম ৯২ বলে অর্ধশতক করা মালান পরের ৪২ বলে সাচ্ছন্দ্যেই তুলে নেন পরের পঞ্চাশ। শেষ পর্যন্ত ১৪৫ বলে ১১৪ রানে অপরাজিত থাকেন মালান, আদিল রাশিদ করেন ১৭ রান।
তাইজুল ইসলাম এইদিন বাংলাদেশের সেরা বোলার, রান বেশি দিলেও সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন তিনি। ৩৫ রানে ৩ উইকেট নেন মেহেদী মিরাজ। তাছাড়া সাকিব আল হাসান ও তাসকিন শিকার করেন ১টি করে উইকেট।
এইদিন টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা আশানুরূপ হয়নি বাংলাদেশের। হতাশ করেছেন লিটন দাস, শুরু থেকে অস্বস্তিতে থাকা লিটন আউট হন ১৫ বলে এক ছক্কায় মাত্র ৭ রান করে। তবে অধিনায়ক তামিম ইকবালের সম্মুখ নেতৃত্বে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে দলের সংগ্রহ।
কিন্তু আশা জাগিয়েও নিরাশ করেছেন তামিম, পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মার্ক উডের বলে স্ট্যাম্প ভেঙেছে তার; আউট হবার আগে করেন ৩২ বলে ২৩ রান। তবুও পাওয়ার প্লেতে ৫৪ রান তুলে বাংলাদেশ। রান আরো বেশি হতে পারতো; তবে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডট বল। অবিশ্বাস্যভাবে পাওয়ার প্লেএ ১০ ওভারেই ৪৬টি ডট বল খেলেছে বাংলাদেশ।
পরের অধ্যায়টা নাজমুল হোসেন শান্তের, চার নাম্বারে নামা মুশফিকুর রহিমের সাথে মিলে সামাল দিতে থাকেন দলের চাহিদা। দু’জনে মিলে গড়েন ৪৪ রানের জুটি। তবে অতিরিক্ত ডট বল খেলার চাপ থেকে বের হতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন মুশফিক, ৩৪ বলে ১৭ রানে আউট হন তিনি।
পাঁচ নাম্বারে সাকিব আল হাসান আসেন মাঠে। তবে তার সাথে শান্তর জুটিটা জনে উনি। ১১ রানের জুটি ভাঙে সাকিব ১২ বলে ৮ রান করে আউট হলে। ভরসার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। দলীয় রান তখন ৪ উইকেটে ১০৬। সেখান থেকে মাহমুদউল্লাহকে সাথে নিয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব রান যোগ করেন শান্ত।
সেই জুটি ভাঙে দলীয় ১৫৯ রানে শান্ত ৫৮ আউট হলে। আউট হবার আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক স্পর্শ করেন শান্ত, আউট হন ৮২ বলে ৫৮ রান করে৷ পরের ওভারেই আর মাত্র ৩ রান যোগ করে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও, ৩১ রান করে মার্ক উডের শিকার তিনি।
এই ত্রাতা হতে পারেননি আফিফ-মিরাজ জুটি। আফিফ ৯ ও মিরাজ আউট হন ৭ রান করে। দু’জনের বিদায়ে দলীয় সংগ্রহ তখন ৪২.৩ ওভারে ৮ উইকেটে ১৮২। তবে ৯ম উইকেট জুটিতে তাসকিন আহমেদ ও তাইজুল ইসলামের ২৮ বলে ২৬ রানের জুটিতে ২০০ রানের গণ্ডি পাড়ি দেয় বাংলাদেশ। ১৪ রান করে আউট হন তাসকিন আহমেদ, ১০ রান আসে তাইজুলের ব্যাটে।
ইংল্যান্ডের হয়ে দুটো করে উইকেট নেন জফরা আর্চার, মার্ক উড, আদিল রাশিদ ও মইন আলি। একটি করে উইকেট নেন উইল জ্যাকস ও ক্রিস উকস।
ব্যাট হাতে ব্যর্থতার ফলে হার দিয়েই সিরিজের শুরু করতে হলো টাইগারদের। তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ এ এগিয়ে গেল থ্রি লায়ন্সরা।