বিনম্র শ্রদ্ধা, যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে ভাষাশহীদদের স্মরণের মাধ্যমে ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করছে জাতি। ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২০ এর প্রতিপাদ্য হলো ‘সীমানা ছাড়াই ভাষা’ থিমটি আন্তঃসীমান্ত ভাষাগুলোতে মনোনিবেশ এবং আদিবাসীদের ঐতিহ্য রক্ষায় সহায়তা করবে।
পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন সেসব ভাষা আন্দোলনের বীরদের ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খালি পায়ে হেঁটে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফুল দিয়ে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানে গানে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।
১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি মিছিল বের হয়। এসময় পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও কয়েকজন নিহত হন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। এ চেতনাকে ধারণ করে পৃথিবীর নানা ভাষাভাষী মানুষের সাথে নিবিড় যোগসূত্র স্থাপিত হোক, লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো আপন মহিমায় নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে উজ্জীবিত হোক, গড়ে উঠুক নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য বিশ্ব-মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এ কামনা করি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন ‘একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধারণ করে গত ১১ বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, কূটনৈতিক সাফল্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি সেক্টরে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।’
‘রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। আসুন, দৃঢ় সংকল্পে আবদ্ধ হই-মহান একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব,’ বলেন তিনি।
দিবসটি যথাযথভাবে পালনের জন্য সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ছুটির দিন থাকবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল বেদি, আজিমপুর কবরস্থানসহ একুশের প্রভাতফেরি প্রদক্ষিণ এর সংলগ্ন অঞ্চল এলাকাঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সারাদেশের সকল উপাসনালয়ে প্রার্থনা এবং রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে কুরআনখানি ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
জাতীয় দৈনিকগুলো দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে এবং বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেসরকারি রেডিও স্টেশন এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে। অমর একুশে পালন উপলক্ষে বিএনপিও দুই দিনের বিশেষ কর্মসূচি পালন করছে। সূত্র : ইউএনবি।