কারাবন্দী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ সময় হামলায় দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বেশ কয়েকজন নেতা আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রিজভীকে মিরপুরে আল হেলাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ শনিবার সকাল ১০টায় মিরপুর কাঁচাবাজারে বিক্ষোভ মিছিলের আগে রুহুল কবির রিজভী বক্তব্য দেন। এরপরই মিছিল শুরু হলে পুলিশ অতর্কিত লাঠিপেটা শুরু করে। এতে তারা গুরুতর আহত হন।
হামলায় রুহুল কবির রিজভী ছাড়াও দলের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সহ-সভাপতি ওমর ফারুক কাউসার এবং ছাত্রদল ঢাকা কলেজ শাখার সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম তুহিনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছে জানিয়েছেন বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন।
মিছিলে পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘পুলিশের এই হামলা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের এক নগ্ন উদাহরণ। পুলিশের এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডে এটি পরিষ্কার যে, বাংলাদেশ নামক স্বাধীন দেশের পুলিশ এখন দলীয় কর্মীতে পরিণত হয়েছে। দেশকে বানানো হয়েছে পুলিশি রাষ্ট্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করেই বর্তমান অবৈধ শাসকগোষ্ঠী গায়ের জোরে জনগণের শোষকে পরিণত হয়েছে।’
এ সময় পুলিশি হামলায় আহতদের সুস্থতা কামনা করেন এবং এ ধরনের হামলায় মনোবল না হারিয়ে আরও শক্তি নিয়ে বর্তমান দুরাচার শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার আহ্বান জানান রিজভী।
এর আগে মিছিলপূর্ব এক পথসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে ভয়ানক অসুস্থ। তার ডায়াবেটিস সম্পূর্ণরুপে অনিয়ন্ত্রিত। খালি পেটেই ১৫ থেকে ২০ এর মধ্যে ডায়াবেটিস উঠানামা করছে। তিনি কিছুই খেতে পারছেন না, দাঁড়াতে পারছেন না। এই অবস্থায় তাকে জরুরি ভিত্তিতে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসা করা না গেলে যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
‘কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, দেশনেত্রীর মুক্তি ও সুচিকিৎসা নিয়ে দল এবং তার পরিবার-পরিজনদের দাবিকে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না সরকার। দেশবাসী মনে করে যে, বেগম খালেদা জিয়াকে তিল তিল করে নিঃশেষ করতেই বর্তমান সরকার ও সরকারপ্রধান উঠেপড়ে লেগেছে। দেশবাসী আরও মনে করে যে, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে না। তার মুক্তি ব্যতিরেকে মানুষের ভোটের অধিকারসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকার কবরস্থ হয়েই থাকবে’ যোগ করেন রিজভী।
খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজানো মামলায় কারাবন্দী করা হয়েছে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। তিনি বলেন, বেআইনি শাসকগোষ্ঠী ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকিয়ে রেখেছে কেবলমাত্র তাদের ব্যর্থতা, অনাচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যাতে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস না পায়। জনগণের দরকার নেই বরং জনগণকে ভয় দেখিয়ে চিরকাল রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখার জন্যই গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা তথা রক্তপাতের মাধ্যমেই দেশশাসন করা হচ্ছে।
‘মহা দুর্নীতি ও অবাধে লুটপাট কার্যকর রাখার জন্যই একদলীয় নব্য বাকশালী শাসন কায়েম করা হয়েছে। প্রতিনিয়তই দেশব্যাপী শুধু হাহাকার ও দীর্ঘশ্বাসের শব্দ ধ্বণিত প্রতিধ্বণিত হচ্ছে। জাতিকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করতে এবং হারানো গণতন্ত্র ফিরে পেতে ‘‘গণতন্ত্রের মা’’ গণমানুষের প্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিকল্প নেই। আমি আবারও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি’ যোগ করেন রিজভী।