বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কের (সিপিএফ) (২০২৩-২০২৭) অধীনে তিনটি নতুন প্রকল্পে ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন অনুমোদন করেছে।
শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিপিএফ সরকারের অষ্টম ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’ এবং ‘দীর্ঘমেয়াদী পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১’ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এ অর্থ ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জনে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সহায়তা করার পাশাপাশি উচ্চ ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে।
যা বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানে সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করবে; সকলের জন্য সুযোগ প্রসারিত করতে আর্থ-সামাজিক অন্তর্ভুক্তি প্রচার করতে এবং জলবায়ু ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে। এই তিনটিই বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষার মূল অগ্রাধিকার।
বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, ‘এই কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক বিশ্বব্যাংক গ্রুপ এবং বাংলাদেশের মধ্যে থাকা পাঁচ দশকের শক্তিশালী অংশীদারিত্বের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।’
সেক বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশ আরো সমৃদ্ধ হওয়ার লক্ষ্য রাখে; উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের চাহিদা পূরণের জন্য এর আরো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ও নীতির প্রয়োজন হবে। এই সিপিএফ কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারের সংস্কার কর্মসূচিকে সমর্থন করবে এবং অন্তর্ভুক্তি ও স্থিতিস্থাপকতা সমর্থন করবে।’
সিপিএফ প্রস্তুত করার জন্য, বিশ্বব্যাংক গ্রুপ সরকার, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, একাডেমিয়া, মিডিয়া এবং অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদেরসহ মূল অংশীজনদের গ্রুপগুলোর সঙ্গে দেশব্যাপী এবং অনলাইনে ব্যাপক আলোচনা করেছে।
মাল্টিাল্যাটেরাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সির (এমআইজিএ) অপারেশনস বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট জুনাইদ কামাল আহমেদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য রয়েছে- স্বল্প সময়ের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জন করা এবং তাও জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মধ্যদিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বেসরকারি পুঁজি এবং বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে ক্রমবর্ধমান অভিগম্যতা প্রয়োজন হবে।’
আইএফসি’র বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের জন্য কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হোল্টম্যান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের অসামান্য উন্নয়ন প্রবৃদ্ধির গল্পগুলোর মধ্যে একটি। আরো বহুমুখী ও প্রতিযোগিতামূলক বেসরকারি খাতকে উন্নয়নে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সংস্কারমূলক রফতানি বাড়াবে এবং মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।’
হোল্টম্যান বলেন, ‘জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলা এবং প্রশমিত করতে সাহায্য করার জন্য সবুজ বিনিয়োগের জন্য অর্থায়ন ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’
বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশকে সবুজ ও আরো স্থিতিস্থাপক উন্নয়ন এবং বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তি অর্জনে সহায়তা করার জন্য তিনটি প্রকল্পে ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন অর্থায়ন অনুমোদন করেছে।
৫০০ মিলিয়ন ডলার ‘পুষ্টি, উদ্যোক্তা ও স্থিতিস্থাপকতার জন্য কৃষি ও গ্রামীণ রূপান্তরের প্রোগ্রাম’ (পার্টনার) প্রকল্পটি কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য, খাদ্য নিরাপত্তা, উদ্যোক্তা ও জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা প্রচারে সহায়তা করবে।
৫০০ মিলিয়ন ডলার ‘প্রথম সবুজ এবং জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন ক্রেডিট’ দেশটিকে সবুজ এবং জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক উন্নয়নে উত্তরণে সহায়তা করবে। ২৫০ মিলিয়ন ডলার ‘টেকসই মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ এবং রেসিলিয়েন্ট ট্রান্সফরমেশন’ (স্মার্ট) প্রকল্পটি মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজ সেক্টরকে আরো গতিশীল, কম-দূষণকারী, সম্পদ-দক্ষ, এবং জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক বৃদ্ধি সেক্টরে রূপান্তর করতে সাহায্য করবে।
এই তিনটি প্রকল্প অনুমোদিত হওয়ায় বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) মোট চলমান কর্মসূচি দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন। বাংলাদেশে এমজিএ’র বর্তমান প্রোগ্রাম মাত্র ১ বিলিয়ন এবং আইএফসি’র চলমান প্রোগ্রাম প্রায় ১ বিলিয়ন।
সূত্র : ইউএনবি