দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। রোববার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ৪ রানে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ডকে।
এতে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয় তামিমের দল। প্রথম ওয়ানডে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হলেও, দ্বিতীয়টি ৩ উইকেটে জিতেছিল টাইগাররা। এর আগে গত মার্চে ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতেছিলো তামিম-সাকিবরা।
বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজ দিয়ে শেষ হলো বিশ্বকাপ সুপার লিগের লড়াই। ২৪ ম্যাচে ১৫ জয়, ৮ হার ও ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় ১৫৫ পয়েন্ট নিয়ে সুপার লিগ টেবিলের তৃতীয় স্থানে রয়েছে টাইগাররা। ২৪ ম্যাচে ১৫৫ পয়েন্ট রয়েছে ইংল্যান্ডেরও। কিন্তু রান রেটে এগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ২৪ ম্যাচে ১৭৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে বিশ^কাপ খেলবে নিউজিল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডের কাউন্টি গ্রাউন্ডে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডে থেকে একাদশে তিনটি পরিবর্তন এনে মাঠে নামে টাইগাররা। আঙুলের ইনজুরিতে এ ম্যাচে নেই সাকিব আল হাসান। সাকিবসহ শরিফুল ইসলাম ও তাইজুল ইসলামের জায়গায় একাদশে সুযোগ হয়েছে রনি তালুকদার, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ও মুস্তাফিজুর রহমানের। এরমধ্যে ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছে রনি ও মৃত্যুঞ্জয়ের।
অধিনায়ক তামিমের সাথে ইনিংস শুরু করে প্রথম ১১ বলে রান নিতে পারেননি রনি। ১২তম বলে বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খুলেন রনি। পরের ডেলিভারিতেই মার্ক অ্যাডায়ারের বলে আউট হন ৪ রান করা রনি।
দ্বিতীয় উইকেটে দ্রুত রান তুলেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্ত ও তামিম। দলের রান হাফ-সেঞ্চুরি পার করলেও ১ রানের জন্য জুটিতে অর্ধশতক করতে পারেননি তামিম-শান্ত। ক্রেইগ ইয়ংয়ের বলে দ্বিতীয় স্লিপে অ্যান্ড্রু বলবির্নিকে ক্যাচ দেন ৭টি চারে ৩২ বলে ৩৫ রান করা শান্ত। জুটিতে ৪৪ বলে ৪৯ রান উঠে।
শান্তর বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন নিয়মিত ওপেনার লিটন। তামিমের সাথে বড় জুটি গড়ার চেষ্টায় সফল হন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত চার নম্বরে নামা লিটন। জমে উঠা জুটিতে আসে অর্ধশতকও। কিন্তু জুটিতে ৭০ রান আসার পর বিচ্ছিন্ন হন তামিম-লিটন। অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনের বলে মিড অফের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে অ্যাডায়ারকে ক্যাচ দেন লিটন। ৩৯ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় য়ে ৩৫ রান করেন তিনি।
লিটনের বিদায়ের পর নয় ইনিংস পর ৬১ বলে ওয়ানডেতে ৫৬তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান তামিম। অধিনায়কের হাফ-সেঞ্চুরির পর দ্রুত বিদায় নেন আগের ম্যাচে ৬৮ রানের ইনিংস খেলা তৌহিদ হৃদয়। এবার ১৩ রান করেন তিনি।
বড় ইনিংসের আভাস দিয়ে ৬৯ রানে আউট হন তামিম। জর্জ ডকরেলে বলে উইকেট ছেড়ে ছক্কা মারতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ইয়ংয়ের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৬টি চারে ৮২ বলে ৬৯ রান করেন তামিম।
৩৪তম ওভারে দলীয় ১৮৬ রানে তামিমের আউটের পর ইনফর্ম মুশফিকুর রহিমের সাথে দারুন এক জুটি গড়েন মেহেদি হাসান মিরাজ। দু’জনের হাফ-সেঞ্চুরির জুটিতে বাংলাদেশের রান আড়াইশ পার হয়।
হাফ-সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৪৬তম ওভারে ম্যাকব্রিনের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর আউট হন মুশফিক। রিভিউ নিলেও, আম্পায়ার্স কলে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় বাংলাদেশের এই নির্ভরযোগ্য ব্যাটারকে। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৪ বলে ৪৫ রান করেন মুশফিক। ষষ্ঠ উইকেটে মিরাজের সাথে ৭২ বলে ৭৫ রানের জুটি গড়েন মুশফিক।
দলীয় ২৬১ রানে মুশফিকের বিদায়ে বাংলাদেশের ইনিংস ফিনিশ করার দায়িত্ব পান মিরাজ। কিন্তু পরের ওভারে অ্যাডায়ারের বলে ফিরেন ৩টি চারে ৩৯ বলে ৩৭ রান করা মিরাজ।
৭ বলের ব্যবধানে মুশফিক-মিরাজ আউটের পর লোয়ার-অর্ডারে শেষ ৩ উইকেটে মাত্র ৯ রান আসে। ৭ বল বাকী থাকতে ২৭৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের অ্যাডায়ার ৪০ রানে ৪টি, ম্যাকব্রিন-ডকরেল ২টি করে উইকেট নেন।
২৭৫ রানের জবাবে ভালো শুরু করতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। ষষ্ঠ ওভারে দ্বিতীয় স্লিপে লিটনের ক্যাচে ৪ রানে স্টিফেন ডোহানিকে থামিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার মুস্তাফিজ।
শুরুর ধাক্কা দারুনভাবে সামলে বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন পল স্টার্লিং ও অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবির্নি। ২১তম ওভারে দলের রান ১শতে নেন স্টার্লিং ও বলবির্নি। ইনিংসের ২৪তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৭তম হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন স্টার্লিং। পরের ওভারে ওয়ানডেতে ১৪তম অর্ধশতক পূর্ণ করেন বলবির্নি।
স্টার্লিং-বলবির্নির জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে চিন্তায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। ২৭তম ওভারে বাংলাদেশকে দারুন ব্রেক-থ্রু এনে দেন এবাদত। ডিপ স্কয়ার লেগে রনিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৭৮ বলে ৬টি চারে ৫৩ রান করা বলবির্নি। স্টার্লিংয়ের সাথে ১২৫ বলে ১০৯ রান যোগ করেন আইরিশ অধিনায়ক।
৩২তম ওভারে স্টার্লিংকে শিকার করে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরার পথ দেখান মিরাজ। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৩ বলে ৬০ রান করেন স্টার্লিং। ২০ রানের ব্যবধানে দুই সেট ব্যাটারকে হারিয়ে চাপে পড়ে আয়ারল্যান্ড।
সেই চাপকে আমলে না নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান হ্যারি টেক্টর ও লরকান টাকার। চতুর্থ উইকেটে ৬৫ রানে ৭৯ রান তুলে আয়ারল্যান্ডের জয়ের পথ তৈরি করেন তারা। ৪১ ওভারেই ২২৩ রান পেয়ে যায় তারা।
টেক্টর-টাকার জুটি ভাঙতে অকেশনাল স্পিনার শান্তকে আক্রমনে আনেন তামিম। নিজের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে লিটনের দুর্দান্ত ক্যাচে টেক্টরকে বিদায় দেন শান্ত। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৫ রান করেন টেক্টর।
শান্তর ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেটে উজ্জীবিত হয়ে উঠেন মুস্তাফিজ। নিজের শেষ ৩ ওভারে ৩ উইকেট নেন ফিজ। ক্যাম্ফারকে ১, ডকরেলকে ৩ ও টাকারকে ৫০ রানে বিদায় করেন ফিজ। এতে ১৭ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড।
মুস্তাফিজের তোপে দারুনভাবে ম্যাচ জয়ের পথে ফিরে বাংলাদেশ। শেষ ৩ ওভারে ৩২ রান দরকার পড়ে আয়ারল্যান্ডের। ৪৮তম ওভারে ৮ রান এলে শেষ ১২ বলে ২৪ রানের সমীকরণ পায় আইরিশরা। মৃত্যুঞ্জয়ের করা ৪৯তম ওভারে ১টি করে চার-ছক্কায় ১৪ রান নেন অ্যাডায়ার। শেষ ওভারে ১০ রানের দরকার পড়ে আয়ারল্যান্ডের। শেষ ওভারে মাত্র ৫ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের স্বাদ দেন হাসান। ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৭০ রান করে আয়ারল্যান্ড।
বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ৪৪ রানে ৪টি, হাসান ৪৪ রানে ২টি, এবাদত-মিরাজ ও শান্ত ১টি করে উইকেট নেন।