শাকিব খান ও শবনম বুবলীকে নিয়ে শোবিজ পাড়ায় আলোচনা-সমালোচনা অনেক দিনের। তার একমাত্র সন্তান শেহজাদ খান বীরের সংবাদটি গেল বছর প্রকাশ্যে আসার পরই শুরু হয় এই আলোচনা। মাঝে কিছু দিন বিরতি থাকলেও নতুন করে সেই পালে বইছে দমকা হাওয়া। কেননা শাকিব-বুবলীর সম্পর্কের অবনতির বিষয়টি তারা নিজেরাই সামনে এনেছেন।
গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাকিব খান জানান, তাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। বুবলী তাকে ধোঁকা দিয়েছেন এবং বিনা কারণে বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন। শুধু তাই নয়, শাকিবকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে অর্থবিত্ত ও নাম কামিয়েছেন বুবলী। এ ছাড়া বীরের মায়ের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগও আনেন শাকিব।
এসব অভিযোগের কড়া জবাব দেওয়ার অপেক্ষায় বুবলী। আমাদের সময় অনলাইনকে তিনি জানিয়েছেন, মানহানি মামলা করার কথা। আর তা হবে দ্রুতই।
শাকিব-বুবলীর এমন বিতর্কে উঠে এসেছে নানা কথা, যা প্রকাশ্যে না আসলেও চলছে নিজেদের মধ্যে আলোচনা। বুবলীর পরিবারের লোকজন তাদের এই সম্পর্ক আর গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলোতে বিব্রত। তাদের ভাষ্য, বুবলীকে নিয়ে শাকিবের এমন কথা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে তাদের (বুবলীর পরিবারের)। আর কথাগুলো তাদের জন্য বিব্রতকর। এমন অবস্থায় বসে থাকবে না বুবলীর পরিবার! তারা আইনের প্রতি আস্থা রেখেই এগিয়ে যাবেন।
বুবলীর বড় বোন কণ্ঠশিল্পী নাজনীন মিমি বলেন, ‘তারা দুজনেই (শাকিব-বুবলী) সম্মানিত। তবে শাকিব খানের বক্তব্যে এমন কথা আসবে, এটা কেউই আশা করেনি। একজন নারী, সাবেক হলেও তার স্ত্রী, তার সন্তানের মা, তাকে নিয়ে তিনি এসব কথা কীভাবে বলেন? এটা দেখেই তো আমরা অবাক হচ্ছি।’
বুবলীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, শাকিব-বুবলী সংসার করবেন কি না, তা পারিবারিকভাবে বসে সমাধান করা যেত। কিন্তু সেটা না হয়ে, এমন কাদা ছোড়াছুড়ি তারা আশা করেননি।
আরজে নিরবের কথায় একই বিষয় উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ‘আপনার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য সবচেয়ে সহজ অস্ত্র হচ্ছে তার চরিত্রে আঘাত করা। কেউ কোনো প্রমাণ খুঁজবে না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, একটা নায়িকা ফিতা কাটতে গেলে (কোনো শোরুম উদ্বোধন), তাকে ২-৩ লাখ টাকা দিতে হয়। সেখানে একজন নায়িকার আয়ের বিষয়টি নিয়ে কথা বলাটাই হাস্যকর। কারও সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে না-ই চাইতে পারে, কোনো একজন, যে কেউ। সম্পর্ক না রাখতে চাইলে চলে যান। যে মানুষটা এক দিন আপনার স্বামী/স্ত্রী ছিলেন, তাকে নিয়ে এমন কথা আপনারা কীভাবে বলেন। তাকে নিয়ে এমন কুরুচিপূর্ণ কথা বলার মানেই হচ্ছে, নিজেকে ছোট করা বা শেষ করে দেওয়া।’
এ নিয়ে বলতে গিয়ে প্রয়াত গুণী অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি ও সুবর্ণা মুস্তাফার সম্পর্কের বিষয়টি টেনে আরজে নিবর বলেন, ‘এক অনুষ্ঠানে হুমায়ুন ফরীদি স্যারের কাছে উপস্থাপিকা বারবার বলছিলেন, তার সাবেক স্ত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা ম্যামকে নিয়ে কিছু বলতে। স্যার কিন্তু তাকে নিয়ে কোনো কথা বলেনি। বরং উত্তর দিয়েছিলেন, আমি চাই না তার কোনো অসম্মান হোক। তিনি আমার স্ত্রী ছিলেন। এটাই হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি।’
বুবলীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুবলীর অভিনয়ে আসার বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের মত ছিল না। একটা পর্যায়ে পরিবারকে বোঝাতে সক্ষম হন তিনি। এরপর নাম লেখান অভিনয়ে। আর বিয়ের বিষয়টি নিয়েও ঘোর আপত্তি ছিল তার পরিবারের লোকজনের। সেটাও তিনি করেছেন নিজ সিদ্ধান্তে। এখন যেসব কথা (বিবাহ বিচ্ছেদ) উঠছে, সবাই কিন্তু অপেক্ষায় আছেন তার (বুবলী) সিদ্ধান্তের! তাদের কথায়, বুবলীর বড় দোষ, শরীরে ক্যানসার নামক মরণব্যাধি বয়ে বেড়াচ্ছেন। আর সেই কারণেই মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন।
বুবলীর বোন বলেন, ‘একটা সম্পর্ক সুন্দর করা যায়, আবার তা শেষও করা যায়। এভাবে নানা আজেবাজে কথা বলে নিজেদের সুনাম কেন নষ্ট করব আমরা। আমার বোনের দোষ, অভিনয়ে পা রাখা। আর সবচেয়ে বড় দোষ হচ্ছে বিয়ে নামক এমন একটি সম্পর্ক এখনো সে ধরে রেখেছে, যা ক্যানসারের মতো তার পুরো শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। শরীরে ক্যানসার পুষে রাখা আর মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা একই কথা। এটা থেকে বাঁচার রাস্তা একটাই, চিকিৎসা করা। ক্যানসারের ভাইরাস শরীর থেকে ফেলে দিতে হবে। তবেই সে বাঁচতে পারবে। এমন সম্পর্ক রাখার থেকে না রাখাই ভালো।’
শাকিব খানের অভিযোগের বিষয়ে বুবলীর পরিবারের ভাষ্য, ‘একজন টিকটকারও এখন ভালো টাকা আয় করে। সেখানে একজন নায়িকা…। প্রতি ঈদেই তো বুবলী নতুন ছবি মুক্তি পাচ্ছে। তাহলে এই কাজগুলো কি সে বিনা পয়সায় করছে? বুবলীকে নিয়ে শাকিবের এমন অভিযোগ কোনো পরিবারেরই স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবে না। শাকিব প্রমাণ করুক, তার কথাগুলো। চুপ থাকার সময় মনে হয় শেষ হয়ে এসেছে। সে মামলা করুক বুবলী “অবৈধ্য” আয় ও সম্পর্কের বিষয়ে। তদন্ত হলেই তো বেরিয়ে আসবে বুবলী কীভাবে আয় করেছে, আর কী কী করেছে। শাকিবের কথায় বুবলীর কি মান যায়নি? আমাদের উচিৎ তার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করা। আমরা আইনিভাবেই বিষয়টি দেখব। সবসময়, সবকিছু সহ্য করা যায় না। খুব শিগগিরই বিষয়টি আপনাদের সামনে প্রকাশ্যে আসবে। আর কথাগুলো বললে বুবলী নিজেই।’