২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের প্রস্তুতিকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের সাথে নির্বাচনী বছরে প্রত্যাশার ভারসাম্য রাখতে হবে এবং মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট এবং রাজস্ব ঘাটতি মোকাবিলা করতে হবে।
এক্ষেত্রে জনসন্তুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখা এবং অর্থনীতি রক্ষা করা একটি প্রধান বিষয়।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, অতীতে দেখা গেছে নির্বাচনী বছরের বাজেটে প্রায়ই অর্থনীতির উন্নতির চেয়ে, জনগণের সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) একজন বিশিষ্ট ফেলো এবং সামষ্টিক অর্থনীতিবিদ ও জননীতি বিশ্লেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, এবার সন্তোষজনক বাজেট পেশ করার সুযোগ খুবই সীমিত।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সব সরকারই জনগণকে সন্তুষ্ট করে এমন বাজেট দিতে চায়। কিন্তু আর্থিক পরিস্থিতি, রাজস্ব ঘাটতি ও বাণিজ্য ঘাটতির কারণে সরকারের জন্য সেই সুযোগ খুবই সীমিত। যদি এ বিষয়ে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়াও হয়, তা সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে দু’টি সরকার এই বাজেট বাস্তবায়ন করবে। এই বাজেটে নমনীয়তাও রক্ষা করতে হবে। কারণ, সরকার যদি বড় কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে তারা কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’
দেবপ্রিয় বলেন, দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে বাজেট আসছে। এছাড়াও এলডিসি থেকে উত্তোরণ এবং কোভিড-১৯ এর ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলোও বাজেটের ওপর চাপ বাড়িয়েছে।
তিনি মন্তব্য করেন, ‘অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় এবারের বাজেট খুবই জটিল পরিস্থিতিতে তৈরি করতে হয়েছে। কারণ আগে দেশে আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকলেও, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে তুলনামূলক স্বস্তি থাকত। কিন্তু এবার তা নয়।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির হারে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটেছে। টাকা ও ডলার না থাকায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। উভয় ক্ষেত্রেই বড় ঘাটতি রয়েছে, যা একসাথে মোকাবিলা করতে হবে।’
তিনি বলেন, তাই সরকারকে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং বিনিয়োগ কর্মসূচি সীমিত করতে হবে। ফলে আগামী বছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও পরিমিত হওয়া উচিত।
তিনি আরো বলেন, ‘মূলত আর্থিক কাঠামো দুর্বল হয়ে গেছে।’
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতির অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, আগের নির্বাচনী বছরগুলোতে অর্থনীতি এবারের মতো সঙ্কটে ছিল না।
ড. রায়হান বলেন, ‘এর ফলে সে সময় জনসন্তুষ্টির জন্য বাজেট প্রণয়ন করলেও অর্থনীতিতে নতুন বড় কোনো চাপ সৃষ্টি হয়নি। তবে এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে শুধুমাত্র জনসন্তুষ্টির কথা বিবেচনা করে বাজেট করা হলে তা অর্থনীতিতে নতুন চাপ সৃষ্টি করবে।’
সূত্র : ইউএনবি