বিতর্কিত নেতা, মন্ত্রী ও এমপিদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। নেতিবাচক কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারীরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের কোনোভাবেই ছাড় দিতে রাজি নয় দলটি। ঐতিহ্যবাহী এ দলটির ইমেজ ধরে রাখতে যে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতেও দ্বিধাবোধ করবেন না আওয়ামী লীগ প্রধান। ক্যাসিনোকাণ্ড ও পাপিয়াকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নজিরবিহীন শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে দল থেকে বিতর্কিতদের ছেটে ফেলতে চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত দলের অনেকই নজরদারিতে রয়েছেন বলে নীতিনির্ধারণী পর্যায় সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি নরসিংদী জেলার যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়ার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সর্বত্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনায় অনেক প্রভাবশালীদের নাম উঠে আসায়ও বিব্রতবোধ করছে দলটির শীর্ষ নেতারা। ইতোমধ্যে পাপিয়াকে যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে ক্যাসিনোকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও যুবলীগ নেতা জি কে শামীম, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সফিকুল আলম ফিরোজকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। গত নভেম্বরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের সম্মেলনের আগেই চেয়ারম্যানের পদ থেকে মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীকে এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো: আবু কাউছার ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদসহ অনেকেই তাদের পদ থেকে ছিটকে পড়েন এবং কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসে। শিগগিরই যুব মহিলা লীগ ও তাঁতী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ওই সম্মেলনে ক্যাসিনোকাণ্ড ও পাপিয়াকাণ্ডের সাথে জড়িতরা যাতে কোনোভাবেই কমিটিতে ঠাঁই না পায় সে ব্যাপারেও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে দলটির হাইকমান্ড।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা জানান, বিভিন্ন দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দলকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেনÑ এমন বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা যেই হোক না কেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আছেন। এ জন্য থেমে থেমে হলেও শুদ্ধি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। কোনো দুর্নীতিবাজই ছাড় পাবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে ইতোমধ্যে সাবেক আটজন মন্ত্রীসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাদের একটি বড় তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেগুলো নিজস্ব সোর্স দিয়ে যাচাই-বাছাই করছেন। সব সহযোগী সংগঠন ও জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বিতর্কিতদের বিদায় করারও চিন্তাভাবনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হমায়ুন নয়া দিগন্তকে বলেন, মন্ত্রী-এমপি বা যেকোনো পর্যায়ের যত বড় নেতা হোক না কেন অপরাধ করলে কেউ পার পাবে না। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী আগেই নিজের দল থেকে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিসহ কোনো অপরাধকে কোনোদিন প্রশ্রয় দেননি। বিশেষ করে দুর্নীতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রয়েছে। দুর্নীতি বা দলের ভাবমর্যাদা নষ্ট হয় এমন সব নেতিবাচক কর্মকাণ্ড করে কেউ পার পাবে না।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত আছে। এ জন্য থেমে থেমে শুদ্ধি অভিযান চলছে। তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, যারা বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন তারা রেহাই পাবেন না।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শুধু পাপিয়া নয়, অপকর্ম, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকের সাথে যারাই জড়িত তারা নজরদারিতে আছেন। এ ছাড়া এই অপকর্মের পেছনে যারা কলকাঠি নাড়ছেন তারাও রেহাই পাবেন না, তারাও নজরদারির বাইরে নয়। টার্গেট পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।