কোরবানি সবার ওপর ওয়াজিব নয়; বরং যার সামর্থ্য আছে তার ওপর ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যার সাধ্য ছিল কোরবানি দেয়ার; কিন্তু দিলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে উপস্থিত না হয়।’ (মুসতাদরক হাকিম-৭৫৬৫, সহিহুত তারগিব লিল আলবানি-১/২৬৪) এই সামর্থ্য শব্দটিকেই নিসাব শব্দে বলা হয়। সামর্থ্য কখন হবে কিংবা নিসাব পরিমাণ সম্পদ কতটুকু এ ব্যাপারে হাদিসে স্পষ্ট কিছু নেই। এ কারণেই আলেমদের মধ্যে এ ব্যাপারে মতভেদ হয়েছে। স্বামী এবং স্ত্রীর উভয়ের সামর্থ্য থাকলে উভয়ের ওপরই কোরবানি ওয়াজিব। কারো কোরবানি অন্যের জন্য যথেষ্ট হবে না। আব্দুল্লাহ ইবনে হিশাম থেকে বর্ণিত (তিনি রাসূলুল্লাহ সা:-কে পেয়েছিলেন), তার আম্মা জায়নাব বিনতে হুমাইদ তাকে রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সা:-কে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি ওকে বায়াত করুন। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘সে তো ছোট। তিনি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন। আর তিনি তার পরিবারের সবার পক্ষ থেকে একটি ছাগল দিয়ে কোরবানি করেছিলেন। (বুখারি-৭২১০)
রাসূলুল্লাহ সা: যখন কোরবানি দেয়ার ইচ্ছা করতেন তখন দু’টি বড় সাইজের সুন্দর দেখতে খাসি করা কাটান দেয়া পুরুষ মেষ বা ভেড়া ক্রয় করতেন। তাঁর উম্মতের যারা তাওহিদ ও তাঁর রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছে তাদের পক্ষ থেকে একটি কোরবানি করতেন এবং অন্যটি মুহাম্মাদ সা: এবং মুহাম্মাদ সা:-এর পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন। (ইবনে মাজাহ-৩১২২, মুসনাদ আহমাদ-২৫৮২৫, হাদিসটি হাসান)
এই হাদিস দু’টির ভিত্তিতে ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ প্রমুখ ফকিহ বলেন, একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি কোরবানি যথেষ্ট হবে। (সুনানে তিরমিজি-১৫৮৭, তুহফাতুল আহওযি, ১৪২৫ নম্বর হাদিসের আলোচনা, মুয়াত্তা মালিক-১০৩৩)
পরিবার বলতে স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানদের বোঝায়। আর সাধারণত একটি পরিবারে পরিবারপ্রধানের ওপরই কোরবানি ওয়াজিব হয়। সুতরাং এই হাদিস দু’টি দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় না যে, পরিবারের অন্য সদস্যদের সামর্থ্য থাকলেও একটি কোরবানিই সবার জন্য যথেষ্ট হবে। পক্ষান্তরে প্রথম হাদিসে আমরা দেখেছি যার সামর্থ্য আছে সেই কোরবানি দেবে। এ জন্য ইমাম আবু হানিফা, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক প্রমুখ ফকিহ একই পরিবারেও একাধিক ব্যক্তির সামর্থ্য থাকলে প্রত্যেকের জন্য কোরবানি দেয়া প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেছেন। (সঙ্কলিত)