বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার শেষ দিন বলে কথা। এর পর থেকে তাকে আর দেখা যাবে না মাঠে নেতার ভূমিকায়। দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে তার অগণিত ভক্ত। তারা কি বসে থাকতে পারেন প্রিয় অধিনায়কের বিদায়ের দিনে? না, পারেননি কেউ, তাই তো ঘোষণার পরই সারাদেশ থেকে সিলেটে ছুটে আসেন অগণিত ভক্ত। বিউগলের করুণ সুর বাজিয়ে নয়, বজ্রকণ্ঠে ‘মাশরাফি-মাশরাফি’ স্লোগান দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন পুণ্যভূমি সিলেট।
বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছিলেন মাশরাফি- গতকাল শুক্রবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অধিনায়ক হিসেবে তার শেষ দিন। এই ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ভক্তদের হাহাকার, হৃদয়ছোঁয়া গল্প। অনেক ভক্ত ছুটে আসেন সিলেটে ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকতে। শুধু ভক্তরা যে এসেছেন তা নয়, এসেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতিসহ বোর্ড পরিচালকরা। অধিনায়ক মাশরাফির শেষটা যেনো রাঙিয়ে রাখতে চান তারাও।
খেলা শুরুর ৩৪ ওভার না যেতেই হানা দেয় বেরসকি বৃষ্টি। তবু দমে যাননি ভক্তরা। ১৩ হাজার ৩৩৫ আসন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামটির একাংশে দর্শকরা বসতে পারেন ছাদের নিচে। আর বাকিদের জায়গা হয় খোলা আকাশের নিচে। বৃষ্টিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অপেক্ষা করেছেন দর্শকরা, অপেক্ষার ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে।
শুক্রবার মানেই সিলেটে ছুটির আমজে। দোকান-পাট বন্ধ, সবাই ব্যস্ত হয়ে যায় নিজেদের ব্যক্তিগত কাজে। শহরে ভিড়-ভাট্টা খুব একটা দেখা যায় না; কিন্তু গতকাল যেনো ভিন্ন রকম চিত্র। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ভিড় চোখে পড়ার মতো। স্টেডিয়ামের প্রবেশমুখে ছিল গাড়ির মিছিল, টিকিটের জন্য দর্শকদের হাহাকার। অথচ আগের দুটি ম্যাচে ছিল এর উল্টোটা।
পানশি রেস্তোরায় দুপুরের খাবার খেতে গিয়ে দেখা হলো একটি দলের সঙ্গে। সবাই বাংলাদেশের জার্সি পরা, এসেছে নারায়াণগঞ্জ থেকে। মাঠে প্রবেশের মুখে দেখা হয় আরেকটি দলের সঙ্গে, তারা এসেছে নরসিংদী থেকে। ঢাকা থেকে এসেছেন অনেকেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) থেকে এসেছে ২৫ জনের একটি বড় দল। ‘ধন্যবাদ অধিনায়ক’ লেখা বিশাল ব্যানার নিয়ে তারা স্টেডিয়ামে প্রবেশের পর থেকেই মাতিয়ে রেখেছেন’ এসেছেন চট্টগ্রাম-কুমিল্লা থেকেও। সিএনজিতে স্টেডিয়ামে আসতে আসতে কথা হলো ছোট একটি দলের সঙ্গে, তারা এসেছেন ঢাকা থেকে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারা। মাশরাফি অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পরই সিদ্ধান্ত নেন সিলেটে আসবেন। এর পর তিনজন বেরিয়ে পড়েন, রাতের বাসে উঠে সকালে পৌঁছেন। সারাদিন এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করে দুপুরে স্টেডিয়ামের দিকে এসেছিলেন। আবার রাতের বাসে ফিরবেন ঢাকা।
আরেকটি দলের সঙ্গে দেখা হয়, তারা এসেছেন মাশরাফির নামের প্রতিটি অক্ষর দিয়ে বানানো টি-শার্ট নিয়ে। স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে ফটোশিকারিদের কবলে পড়েন। এখানেও তাদের অনীহা। একজন বলে ওঠেন- ‘ভাই দ্রুত, মাশরাফির খেলা দেখতে হবে।’
ভিন্ন ভিন্ন এলাকা থেকে এলেও তাদের আগমনের উদ্দেশ্য ছিল এক। শুধু মাশরাফির জন্য! দূর থেকে আসা সবার গল্প এমনই। কেউ এসেছেন ভোরে আবার কেউ কাকডাকা ভোরে বাসে উঠে দুপুরে পৌঁছেন। ভীষণ ক্লান্ত হলেও চেহারায় স্বস্তির ছাপ, প্রিয় অধিনায়কের খেলা দেখতে পারবেন বলে।
২০১০ সালের ৮ জুলাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় অধিনায়ক মাশরাফির অধ্যায়, গতকাল ৬ মার্চ শেষ হয় এই অধ্যায়ের সমাপ্তি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এই অধ্যায়টি লেখা থাকবে সোনার হরফে!