বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘গণতন্ত্র চাই বলেই এত কিছুর পরও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথেই আছি আমরা। কিন্তু সব কিছুরই একটা সীমা থাকে। আশা করি সরকার সেটা মনে রাখবে।’
শনিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশ ও দেশের মানুষের কাঁধে সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো চেপে বসা অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অনির্বাচিত জাতীয় সংসদ বাতিল এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিসহ দেশের সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের ডাকা আজকের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিকে বানচাল করার জন্য সরকার জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এবং দলীয় সন্ত্রাসীদের অন্যায় ও বেআইনিভাবে জনগণের বিরুদ্ধে নামিয়ে রাজধানী ঢাকায় যে তাণ্ডব চালিয়েছে আমরা তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বিনা উস্কানিতে প্রতিবাদী জনতার শান্তিপূর্ণ অবস্থানে গুলি, টিয়ারগ্যাস চালানো এবং স্বশস্ত্র আক্রমণ মিডিয়া ও সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেশ-বিদেশের জনগণ এই স্বৈরাচারী সরকারের অবৈধ ক্ষমতা জোর করে ধরে রাখার বীভৎস অপপ্রয়াস দেখে স্থম্ভিত হয়েছে। তাদের নির্মম আক্রোসে বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মাথায় মারাত্মক রক্তক্ষরণ, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হওয়া এবং অগণিত নেতা-কর্মীকে নির্বিচারে গ্রেফতারের ঘটনা প্রমাণ করে যে ক্ষমতালোভী এই সরকারের হাতে দেশের কোনো নাগরিক নিরাপদ নন। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণকারী এই সরকার আজ জনগণের শুধুই ঘৃণা ও ধিক্কার পাওয়ার যোগ্য।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারি ও সরকার দলীয় বাহিনীর বেআইনি ও সন্ত্রাসী তৎপরতার জবাব দেয়ার ক্ষমতা জনগণের রয়েছে কিন্তু সেই ক্ষমতা প্রয়োগের ফলে যে অবাঞ্ছিত ও মর্মান্তিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো আমরা তা বরাবরই পরিহার করতে চেয়েছি এবং আজও করেছি। এটা আমাদের দুর্বলতা নয়- জনগণ ও গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা। কিন্তু নিশিরাতের অবৈধ সরকারের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে আমাদের এই দেশটা স্বাধীন হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো প্রাণের বিনিময়ে। আমরা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি, জীবন দিয়েছি গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের জন্যও। গত ১৪ বছর আমাদের হাজারো নেতা-কর্মী জীবন দিয়েছেন, গুমের শিকার হয়েছেন শত শত নেতা-কর্মী। নির্যাতিত হয়েছেন কয়েক হাজার। মিথ্যা মামলায় হয়রানীর শিকার হয়েছেন লাখো নেতা-কর্মী। গণতন্ত্র চাই বলেই এত কিছুর পরও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথেই আছি আমরা। কিন্তু সব কিছুরই একটা সীমা থাকে। আশা করি সরকার সেটা মনে রাখবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা জেনেছি যে, মাতুয়াইল ও শ্যামলীতে গাড়িতে আগুন দেয়ার ও ভাংচুর করার ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। অথচ পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে খবর বেরিয়েছে যে পুলিশের সামনেই এসব ঘটনা ঘটিয়ে ভিডিও করে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে চলে গেছে। কারা এটা করতে পারে তা অনুমানের জন্য বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার প্রয়োজন নেই।’
‘নিজেরা অপরাধ করে বিএনপির উপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিচ্ছি,’ বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।