আশ্বাস নয়, আন্দোলনের মাঠে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশে চান বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এক দফার আন্দোলনে সব ধরনের ঝুঁকি নিতে রাজি তারা। তবে, কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে সিনিয়র নেতারা মাঠে না নামায় হতাশ তারা। এতে আন্দোলন সফল করে ফসল ঘরে তুলতে বেগ পেতে হচ্ছে বিএনপির ।
টানা তিন মেয়াদ ধরে ক্ষমতার বাইরে একসময়কার শাসক দল বিএনপি। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে বর্তমান সরকার। বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক ফিরে আনার জন্য এক যুগের বেশি সময় ধরে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। এ আন্দোলন করতে গিয়ে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হামলা মামলা নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছে।
২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে গিয়েছিল বিএনপি। এ আন্দোলন সফল করতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছিল তৃণমূল নেতা কর্মীরা। রাজধানী ঢাকা ব্যতীত প্রায় সকল বিভাগীয় শহর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ঢাকায় সেভাবে আন্দোলন জমাতে পারিনি বিএনপি। রাজনীতি দাবার ঘুঁটি চালে ব্যর্থ হয় দলটি। তবে নেতাকর্মীরা সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছিল আন্দোলনের সফল হতে।
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একচেটিয়া ভোটে হেরে যায় বিএনপি। নির্বাচনে নেতাকর্মীদের আশা ছিল ক্ষমতায় আসবে তাদের দল, কিন্তু সে আশা গুড়ে বালি। ক্ষমতায় আসা থাক দূরের কথা বিরোধী দল হতে পারেনি বিএনপি। মাত্র ছয় আসনে জয় করেছিল দলটি। গত বছরের ১০ ডিসেম্বরে গোলাপবাগ মাঠের সমাবেশে ওই এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা পদত্যাগ করেন। কিন্তু তাতে আন্দোলন কাঙ্ক্ষিতভাবে বেগবান হয়নি।
সামনে কড়া নাড়ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের বছর ঘিরে আন্দোলন সচল রেখেছে দলটি। আন্দোলন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে তাদের ১৮ জন নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছেন। মামলা ও জেল জুলুমের শিকার হতে হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। সরকারের পতনে রাজপথে ফয়সালা করতে কেন্দ্র থেকে কঠোর কর্মসূচির দাবি তোলেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এরই প্রেক্ষাপটে কঠোর কর্মসূচি দেয় বিএনপি। কর্মসূচির ধারবাহিকতায় গত ২৯ জুলাই ঢাকার পাঁচটি স্থানে দলীয় নেতাকর্মীরা অবস্থান করার কথা থাকলেও সমন্বয়হীনতার কারণে কর্মসূচিতে ভাটা পড়ে। এতে দলের শীর্ষপদে থেকেও কয়েকজন নেতা মাঠে থাকেননি বলে অভিযোগ ওঠে।
সূত্র জানায়, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির দিনে নির্ধারিত স্পটে যাননি স্থায়ী কমিটির তিনজন সদস্য। তিনটি স্পটে তাদের প্রধান দায়িত্বে থাকার কথা ছিল। স্পটে যাননি কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যানও। স্পটে যাননি বা গেলেও পরিস্থিতি দেখে ফিরে আসেন চারজন যুগ্ম মহাসচিব। দু’জন সাংগঠনিক সম্পাদক স্পটে ছিলেন না। গাবতলী স্পটের দায়িত্বে থাকা একজন নেতার সমন্বয়হীনতার বিষয়টিও এসেছে মূল্যায়ন রিপোর্টে। ঢাকা জেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের অনেকে ওই দিন সঠিক দায়িত্ব পালন করেননি। তবে, ওই দিনের ভূমিকা মূল্যায়ন করেই ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিকদল ও স্বেচ্ছাসেবকদল- এই চার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বিএনপির আন্দোলনের ভ্যানগার্ড সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত। এরই মধ্যেই তিনটি সংগঠন সারাদেশে তারুণ্যের সমাবেশে ভোটবঞ্চিত তরুণ ভোটারদের জাগ্রত করেছে। তবে সেটার ধারাবাহিকতা ঢাকার অবস্থান কর্মসূচিতে ছিল না। সঙ্গত কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে এসব সংগঠনের শক্তি, সামর্থ্য ও নেতৃত্ব নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
কয়েকটি কর্মসূচি পালনে রাজধানী বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীদের সাথে কথা বললে তারা নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা মামলা রয়েছে। ফলে বাসায় থাকতে পারি না। পুলিশ প্রশাসন প্রতিমুহূর্তে হয়রানি করে যাচ্ছে। এভাবে চলা যায় না। এর একটা শেষ টানতে হবে এবার। আমরা চাই কেন্দ্র থেকে খুব তাড়াতাড়ি কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করুক। এ সরকার কে আর সময় দেয়া যায় না। গেল দুই মেয়াদে অনেকে ভোট না দেয়ার আফসোস থেকে শেষবার মতো মাঠে নামতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে চান তারা।
খিলগাঁও থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি অলি আহমদ বলেন, আমরা মামলায় জর্জরিত। বাসায় থাকতে পারছি না। প্রায় সময় পুলিশ বাসায় যায়। গ্রফতার আতঙ্কে থাকি। এই বুঝি কিছু হয়! তাই আমি বলতে চাই, এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে আর সময় দেয়ার দরকার নেই। এই মুহূর্তে একটা কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া প্রয়োজনে পড়েছে। আমরা কেন্দ্র থেকে ডাকের অপেক্ষায় আছি। ডাক এলেই নেমে পড়বো।
জুরাইন থেকে বিএনপি কর্মী রহিম মিয়ার বলেন, আর পেছনে ফিরে যাওয়ার সময় নেই। এভাবে আর বাঁচা যায় না। কেন্দ্রের ডাকের অপেক্ষায় আছি। ডাক এলেই ঝাঁপিয়ে পড়বো। ইনশাআল্লাহ।