উজানের ঢল আর বৃষ্টিতে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে উত্তরের প্রায় সব নদ-নদী। এরই মধ্যে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমরের পানি। প্লাবিত হয়েছে নদ-নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো। পানিবন্দী হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন অন্তত ৫০ হাজার পরিবার। সঙ্কট দেখা দিয়েছে শুকনা খাবারের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার পানি লালমিনরহাটের তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া ১০ সেন্টিমিটার উপর দিতে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তিনি আরো জানান, দেশে ও উজানে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, আপার করতোয়া, আপার আত্রাই, কুলিখ, টাঙ্গন নদীসমূহের পানি সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদী ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার আরো উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ প্রকৌশলী মুস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পঞ্চগড়ে ৯০ ও কুড়িগ্রাম ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
এদিকে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়ার নোহালী, কোলকোন্দ, আলমবিদিতর, লক্ষিটারী, মর্নেয়া ও গজঘন্টা ইউনিয়ন, কাউনিয়ার বালাপাড়া, টেপামধুপুর, পীরগাছার তাম্বুলপুর, ছাওলা ইউনিয়নের তিস্তা বেষ্টিত চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কোথাও কোথা হাটু থেকে কোমড় পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর। শব্দ লাগানো আমন ধান তলিয়ে গেছে। উপচে গেছে পুকুর। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত ২০ হাজার মানুষ। জরুরি ভিত্তিতে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য শুকনা খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
রংপুরের ডিসি মোবাশ্বের হাসান জানিয়েছেন জানিয়েছেন, তিস্তা আবারো ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাট হয়েছে। প্রয়োজনীয় সবকিছুই মজুদ আছে।
এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম, কালিগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে তিস্তাপাড়ের নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তাবেস্টিত চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো। এসব এলাকার অন্তত ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তিস্তার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল। এছাড়াও কুড়িগ্রামের রাজারহাটের তিস্তার চরাঞ্চল।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, সার্বক্ষণিকভাবে জলমগ্ন ও ভাঙ্গন এলাকাসমূহ তদারকি করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে সতর্ক রাখা হয়েছে। যখন যা প্রয়োজন হবে, তখন তা পৌঁছে দেয়া হবে। তিনি আবহাওয়া অনুযায়ী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলোর মানুষকে উচু স্থান এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।