বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার এখন বিএনপি ভাঙার চেষ্টা করছে। এটা কখন করে? দেউলিয়া হলে। সরকার দেউলিয়া হয়ে এখন বিএনপি ভাঙার চেষ্টা করছে। এগুলো করে কোনো লাভ নেই।
তিনি বলেন, আমাদের সিনিয়র নেতারা কেউ বাকি নেই যার মামলা শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এ জন্য বিশেষ সেল করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের সরকারি কমকর্তা এদের বিরুদ্ধে কথা বলায় মারাই গেল। আজকে সত্য লিখলেই জেলে যেতে হচ্ছে। এই দেশ আমরা কেউ চাইনি।
বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রি. জে. আ স ম হান্নান শাহ’র সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ বলে, বিএনপি বিপদে আছে। আরে বিএনপি কোনো বিপদে নেই, বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে আরো শক্তিশালী হয়েছে। বিপদে আছে জনগণ। সরকার দেশের মূল সত্ত্বাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা শুধু ভূখণ্ডের জন্য যুদ্ধ করিনি। একটি রাষ্ট্র কাঠামোর জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, স্বাধীনভাবে কথা বলার জন্য যুদ্ধ করেছি।
তিনি বলেন, আজকে রেস্টুরেন্টে কথা বলা যাবে না, বিয়ে বাড়িডে গিয়ে সাবধানে কথা বলতে হয়। কথা বলার ওপর নিরাপত্তা নির্ভর করে। টকশোতে যাওয়ার আগে সাবধান করে দেয়া হয়। এমনকি ছেলে-মেয়ে তুলে নিয়ে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। কার বাসায় যাবো, কার সাথে বসব, কোন অনুষ্ঠানে যাব- সবজায়গাই নজরদারি।
তিনি আরো বলেন, বিসিএস-এ মেধাবী ছেলেরা লিখিত পরিক্ষায় পাশ করলেও যদি তার পরিবার বিএনপি করে তাহলে তাকে ভাইভায় পাশ করানো হয় না। আর যদি কেউ পাশ করেও তার চাকরি মিলে না। যদি বিএনপির সাথে কারো নূন্যতম সম্পর্ক থাকলে তার আর প্রমোশন হয় না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, উন্নয়ন নিয়ে জনগণের সাথে সরকার ছলচাতুরি করেছে। সব করেছে ঋণ করে। ঋণের বোঝা জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে আজকে সরকার বাহবা নিতে চায়। ঋণ করে পোলাও মাংস খাওয়ার ভিতরে কোনো কৃতিত্ব নেই।
তিনি বলেন, এর আগে র্যাবসহ নয়জনের ওপর স্যাংশন হয়েছিল। এবার ভিসা নীতি। ভিসা নীতি কাদের বিরুদ্ধে হয়। যারা গণতন্ত্র হত্যাকারী ও দুর্নীতিবাজ। এই ভিসা নীতিতে সাংবাদিক, বিচারপতি, আমলা, রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তা.. তাহলে বাদ পড়বে কে? এটি খুশির কথা নয়, লজ্জার। এর জন্য দায়ী এই কর্তৃত্ববাদী সরকার।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ বলে খালেদা জিয়া দণ্ডিত। কিসের দণ্ড? কিসের মামলা? যে দুই কোটির আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে, তা এখন নয় কোটি টাকায় রূপান্তরিত হয়েছে। আসলে খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে রাখা যাবে না। তাকে বাইরে রাখা যাবে না। জিয়া পরিবারের কথা শুনলেই এরা ভয় পায়। তারপরও এরা বলবে দেশে আইনের শাসন আছে। আবার বলে এর অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এদের কথা শুনলে পাগলও হাসে।
প্রয়াত হান্নান শাহ’র স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ১/১১তে যখন খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের জেলে নেয়া হলো তখন তিনি নিজের জীবনবাজি রেখে যে ভূমিকা রেখেছেন জাতি তা আজীবন কৃতজ্ঞতা সাথে স্মরণ করবে। হান্নান শাহ যে গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা পুনরুদ্ধার করতে পারলেই পরপারে থেকেও তিনি শান্তি পাবেন।
আ স ম হান্নান স্মৃতি সংসদের সভাপতি ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শাহ রিয়াজুল হান্নান, সহ সাংগঠনিক বেনজির আহমেদ টিটু, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল অব. জয়লান আবেদীন প্রমুখ।