সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে আজ ঢাকায় জনসমাবেশ করবে বিএনপি। বেলা ২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ হবে। সমাবেশ থেকে দুর্গাপূজার পরে ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয়া হতে পারে। আগামী ২৮ অক্টোবর ওই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে এক দফা দাবিতে চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে নামতে পারে দলটি। যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছানো পর্যন্ত যা চলমান থাকবে।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নতুন যে কর্মসূচি শুরু হবে তার মূল লক্ষ্য থাকবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ঠেকানো। এ জন্য তফসিলের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই কঠোর কর্মসূচি শুরু করতে চায় বিএনপি। দলের নেতারা মনে করছেন, উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে তফসিল ঘোষণা করা সহজ হবে না। তবে তফসিল ঘোষণার পরের এক সপ্তাহে আন্দোলনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিএনপি।
জানা গেছে, গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভবনমুখী পদযাত্রা-ঘেরাও, অবস্থান, অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে নেতারা মতামত দিয়েছেন। তবে কবে থেকে এসব কর্মসূচি শুরু হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। এ ছাড়া বৈঠকে আজকের জনসমাবেশ থেকে সরকারকে এক দফা মেনে পদত্যাগ করতে আলটিমেটাম দেয়ার ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, জনসমাবেশ থেকে আগে আলটিমেটাম দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও এখন আর সে বাস্তবতা নেই। তা ছাড়া আলটিমেটাম দিলে পূজার মধ্যে বড় কর্মসূচি না থাকলেও আন্দোলন অবস্থা তৈরি হবে। ফলে নেতাকর্মীদের পূজা ঘিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে জনসংযোগ ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরিবেশ নাও থাকতে পারে। সে কারণে আজকের জনসমাবেশ থেকে আলটিমেটাম দেয়া নাও হতে পারে। তবে পূজার মধ্যে সরকারকে দাবি মেনে নিতে হুঁশিয়ারি দেয়া হবে আজকের সমাবেশ থেকে।
জানা গেছে, বিএনপির শীর্ষ নেতারা একমত হয়েছেন যে, তফসিলের আগেই বড় আন্দোলনে যেতে হবে। কোনোভাবেই একতরফা তফসিল ঘোষণা করতে দেয়া যাবে না।
জানা গেছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা নির্বিঘœ করতে পূজার মধ্যে মাঠের বড় কোনো কর্মসূচি রাখছে না বিএনপি। এই সময়ে এক দফা দাবির পক্ষে জনসচেতনতা তৈরিতে লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি থাকতে পারে। এ ছাড়া ঢাকায় একটি সেমিনারও হতে পারে। এ দিকে চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়ন নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থায়ী কমিটির গত সোমবারের নির্ধারিত বৈঠক ছাড়াও অনির্ধারিত একাধিক বৈঠক করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সাথেও তানা বৈঠক করেছেন। যদিও আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ জোট গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে এখনো বৈঠক করেনি বিএনপি।
জানা গেছে, চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনের সময় ঢাকামুখী সব কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। এ ছাড়া প্রয়োজনে সারা দেশেও কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের মতো কর্মসূচি আসতে পারে।
বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহাসমাবেশের আদলে আজকের জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বিপুল উপস্থিতি ঘটিয়ে সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে তারা। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত কয়েক দিন ধরে ঢাকায় মহিলা সমাবেশ, কৃষক সমাবেশ, যুব সমাবেশ, শ্রমিক কনভেনশন, ছাত্র কনভেনশনের মতো সিরিজ কর্মসূচি করেছে দলটি। সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি থাকবেন।