রাজনীতিতে ফের উত্তাপ ছড়িয়েছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে আবারো রাজনীতিতে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপের কর্মসূচি হিসেবে আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ওই দিন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগও পাল্টা সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ শিরোনামে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য ডিএমপি কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছে শাসক দল।
দলটির নেতারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাস তিনেক বাকি আছে। আগামী মাসে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথাও বলেছে। কিন্তু নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি নির্বাচন বানচাল করার জন্য একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ জন্য ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। তারা ওই দিন রাজধানী ঢাকা অচল করে দেবে- এমন তথ্যও আছে। কিন্তু সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তো ঘরে বসে থাকতে পারে না। ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের নেতাকর্মীদের সতর্ক বার্তা পাঠানো হয়েছে। ২৮ অক্টোবর ঘিরেও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেবেন। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট সচিবালয়, পুরানা পল্টন মোড়, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউসহ আশপাশের এলাকায় নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন।
ওই দিন সমাবেশে জনসমুদ্রে পরিণত করার জন্য জোরালো প্রস্তুতি নিয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কঠোর পরিশ্রম করছেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও সেই প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত শনিবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, ২৮ তারিখ আওয়ামী লীগেরও মহাযাত্রা রয়েছে। ২৮ তারিখ বিকেলে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের সমাবেশে জনসমুদ্র হবে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে জানান, ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর থেকেই তা পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপি ও তার মিত্ররা আন্দোলন করে আসছে। এরপর সংশোধিত সংবিধানের আলোকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপি ও তার মিত্ররা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েও নিশ্চিত পরাজয় জেনে মাঝপথে ভোটের মাঠ থেকে পালিয়েছে। এরপর থেকে তারা জেনে গেছে সংশোধিত সংবিধানের আলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তারা জিততে পারবে না। এ জন্য নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর তারা সরকারের পতন ঘটানোর জন্য রাজধানীর নয়াপল্টনে বড় সমাবেশ করতে চেয়েছিল- সরকারের কাছে এমন তথ্য ছিল। শেষমেশ বিএনপি রাজধানীর গোলাপবাগের গরুর হাটে গিয়ে নামেমাত্র ওই সমাবেশ করে মুখ রক্ষা করে। গত ২৭ জুলাই রাজধানীতে বড় সমাবেশ করার পর ২৮ জুলাই ঢাকা প্রবেশ মুখে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েও সফলতা পায়নি। তবে এবার মনে হচ্ছে, বিএনপি শেষ কামড় দেয়ার জন্য ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ডেকেছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ও স্যাংশনের কারণে তারা হয়তো হালে পানি পাচ্ছে। কিন্তু রাজপথ দখলের মতো সুযোগ বিএনপি কখনোই পাবে না। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদেরও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। তাদের কঠিন প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে ১৮ অক্টোবরও বিএনপির শীর্ষ নেতারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করে সরকার পতনের হুমকি দিয়েছে।
আওযামী লীগ নেতারা মনে করেন, গত ১২ জুলাই থেকে বিএনপি সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এ দিকে আগামী মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর তাদের চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলন একেবারে শেষের দিকে চলে এসেছে। ২৮ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ওই মহাসমাবেশ থেকে বিএনপি সরকার পতন আন্দোলন সফলতার জন্য হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওসহ যেকোনো ধরনের কর্মসূচির ডাক দিতে পারে- এমন তথ্যও রয়েছে। এ জন্য ২৮ অক্টোবর ঘিরে সরকারি দল হিসেবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিএনপি যদি ওইদিন জ্বালাও পোড়াওসহ কোনো ধরনের নাশকতার চিন্তাও করে তা সাথে সাথেই প্রতিহত করার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে রাজপথে থাকবে নেতাকর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। তারা আন্দোলন করে জ্বালা-পোড়াও করে একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। অতীতেও তারা আন্দোলন করে সরকার পতন ঘটাতে চেয়েছে। কিন্তু শেষমেশ গোলাপবাগের গরুর হাটে গিয়ে তাদের আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবরও বিএনপি যদি জ্বালাও-পোড়া করে, জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে আসে তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা তা প্রতিহত করব। বিএনপি আবারো ব্যর্থ হবে। তিনি বলেন, বিএনপি অবরোধ করলে আমরা পাল্টা অবরোধ করব। রাজপথে কোনো প্রকার নাশকতা বিএনপিকে করতে দেয়া হবে না। কোনো ছাড় বিএনপিকে দেয়া হবে না, বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত আমরা রাজপথে সক্রিয় থাকব।