ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা। হুগলী নদীর তীর ঘেঁষা এই নগরীর পরতে পরতে রয়েছে ঐতিহ্যের ছাপ। যার একটা বিশাল অংশজুড়ে আছে ইডেন গার্ডেন। বিশ্ব ক্রিকেটের তৃতীয় বৃহৎ স্টেডিয়াম। রাত পোহালেই যেখানে পা রাখবে বাংলাদেশ।
ভারতীয় উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর স্টেডিয়াম ইডেন। যার তুলনা চলে লর্ডস – মেলবোর্নের মতো ক্রিকেটের তীর্থস্থানের সাথে। ১৮৬৪ সালে নির্মিত হওয়ায় এটিই ভারতের সবচেয়ে পুরনো স্টেডিয়াম। একটা সময় লক্ষাধিক মানুষ এখানে একসাথে গর্জে উঠতো সমস্বরে। যদিও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজারে।
কলকাতার প্রতিটা স্থাপত্যের মতোই দীর্ঘ এক ইতিহাস আছে ইডেন গার্ডেনের। একটা বাগান কী করে বদলে গেল স্টেডিয়ামে; গল্পটা হয়তো অনেকেরই আড়ালে। সেই গল্প না হয় আরেকদিন বলা হবে!
তবে ইডেন গার্ডেন ক্রিকেট দুনিয়ার এক স্মৃতি বিজড়িত নাম। এক আবেগের নাম। কত অর্জন, কত গর্জন, কত ইতিহাসের সাক্ষী এই স্টেডিয়াম! সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কত কীর্তির! শত বাক বদল আর চিত্রনাট্যের মঞ্চ হয়ে দাঁড়িয়ে নন্দন কানন।
অস্ট্রেলিয়া-ভারত গা ছমছমে টেস্ট, লক্ষণ-দ্রাবিড়ের অবিশ্বাস্য যুগলবন্দী, জগমোহন ডালমিয়ার স্মৃতি মাখা, সৌরভ গাঙ্গুলির ব্যাট হাতে ছবি আঁকা, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাফেটের চার ছক্কা; কত কত রোমাঞ্চকর ম্যাচ আর হাসি-কান্নার অদ্ভুতে মিশেল; কপিল-হারভজনের হ্যাটট্রিক আর রোহিত শর্মার ইতিহাস গড়া ২৬৪! এমন আরো শতো রূপকথার সাক্ষী ইডেন।
চাঁদের যেমন কলঙ্ক আছে, আছে ইডেন গার্ডেন্সেরও। দর্শকদের দ্বন্দ্ব আর রেষারেষি থেকে দাঙ্গা, আছে প্রাণ হারানোর ঘটনাও। বোতল বৃষ্টিতে থমকে যাওয়া ভারত-শ্রীলঙ্কা সেমিফাইনাল তো ইতিহাস হয়েই আছে! তবে সব ছাপিয়ে ১৯৮০ সালের মোহনবাগান আর ইস্ট বেঙ্গল ম্যাচে পদদলিত হয়ে ১৬ দর্শকের মর্মান্তিক মৃত্যু ইডেনকে কলঙ্কিত করেছে।
ভারতের স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে এই ভেন্যুতেই সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলা হয়েছে৷ সাদা পোষাকের এই ফরম্যাট রঙিণ হয়ে আছে ভারত-বাংলাদেশের গোলাপি বলের লড়াইয়ে। জাকজমকপূর্ণ আয়োজনে বছর চারেক আগে এই ইডেনেই গড়ায় উপমহাদেশের প্রথম ডে-নাইট টেস্ট।
ঢাকা থেকে আকাশপথে ২৫০ কিলোমিটারেরও কম দূরত্ব ইডেনের। তবে ‘পাশের বাড়ির’ মাঠে গত ৩৩ বছরে কোনো ওয়ানডে খেলা হয়নি বাংলাদেশের। সেই ১৯৯০ সালে এশিয়া কাপে প্রথমবার ইডেনে ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ, মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কার।
বৃষ্টি বিঘ্নিত সেই ম্যাচে যদিও বাংলাদেশ ৭১ রানে হেরে যায়। তবে ৯৫ বলে অপরাজিত ৭৮ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হন আতহার আলি খান। যা ওয়ানডে কোনো বাংলাদেশীর প্রথম ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ৫০ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু।
এবারের বিশ্বকাপে মোট ৫টি ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে ইডেন। যেখানে আছে বাংলাদেশেরই দু’টি ম্যাচ। ২৮ অক্টোবর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ও ৩১ অক্টোবর খেলবে পাকিস্তানের বিপক্ষে।
ইডেনের উইকেট বেশ অনেক আগে থেকেই রানপ্রসবা। ২৭৫ কিংবা তারচে বেশি রান হরহামেশাই দেখা যায় এখানে। ৩০০ রানের গণ্ডিও পেরিয়েছে নয়বার। তবে স্পিনাররাও একটু বাড়তি সুবিধা পায়। প্রথম ইনিংসের গড় এই মাঠে ২৪১, দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৩।
এখন পর্যন্ত ইডেনের ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করে জয় এসেছে ২০ ম্যাচে। পরে ব্যাট করে জয় এসেছে ১৪ ম্যাচে। তাই বলাই বাহুল্য, এখানে ব্যাটে-বলে লড়াইটা জমে সমানে সমানে।
সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ৪০৪/৫ ভারতের। সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর ১২৩ ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ইডেনের মাঠে সর্বোচ্চ রান শচীন টেন্ডুলকারের, ৪৯৬। সর্বোচ্চ ১৪ উইকেট অনিল কুম্বলের।
এখন দেখার বিষয়, বিশ্বকাপে খাদের কিনারে পৌঁছে যাওয়া বাংলাদেশ অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই মাঠে নতুন ইতিহাস লিখতে পারে কি না!