বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী অবরোধের প্রথম দিনে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় রয়েছে অবরোধকারীরা। পাশাপাশি সক্রিয় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে আতঙ্ক ও দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছে কর্মজীবীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং এশিয়ান হাইওয়ের নারায়ণগঞ্জ অংশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে নেতাকর্মীরা। এছাড়া রুপগঞ্জের গোলাকান্দাইল, ফতুল্লা শিবু মার্কেট, নারায়ণগঞ্জের কিল্লারপুল এলাকায় পিকেটিং, রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে অবরোধকারীরা। কিল্লারপুলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সানারপাড় এলাকায় জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের নির্দেশে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি, শিমরাইল এলাকায় মহানগর ছাত্রদলের নির্দেশে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদল এবং এশিয়ান হাইওয়ের মদনপুর এলাকায় জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল ইসলাম সজীবের নেতৃত্বে কয়েকটি টায়ার পোড়ানো হয়। এসময় তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দেন এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানান। তবে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তারা সড়ক থেকে সরে যান।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন জানান, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছি। যতদিন পর্যন্ত আমাদের এ দাবি বাস্তবায়ন না হবে ততদিন আমরা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।
এদিকে রোববার সকাল থেকে মহাসড়কে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়, সানারপাড় এবং সাইনবোর্ডে এমনই চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কিছুক্ষণ পরপরই র্যাব ও বিজিবি টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া ডিবি পুলিশকেও মহাসড়কে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক (ক অঞ্চল) আল মামুন বলেন, সকাল থেকেই আমরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছি। যেকোনো অরাজকতা রোধে আমরা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।
নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) চাই লাউ মারমা বলেন, মহাসড়কের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কয়েক শ’ পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরবর্তী কোনো নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত আমরা মহাসড়কেই থাকব।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, যাত্রী ও যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে আমরা সবসময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
এদিকে বিএনপির ডাকা সারাদেশে দ্বিতীয় দফার অবরোধ কর্মসূচির প্রথমদিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে যানবাহন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ।
সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় এলাকায় এ চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় সকাল থেকেই সড়কে আঞ্চলিক যানবাহন কম চলাচল করছে। এতে অফিসগামী ও জরুরি কাজে বের হওয়া যাত্রীদের বাসস্ট্যান্ডগুলোতে দীর্ঘক্ষণ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে বেশি টাকা খরচ করে যাত্রীরা অটোরিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেলযোগে কর্মস্থলে যাচ্ছেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী ইউসুফ আল আজিজ জানান, আধা ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। এখনো বাসের দেখা পাইনি। অফিসে যেতে পারব কি না জানি না।
হৃদয় হোসেন নামের আরেক যাত্রী বলেন, মৌচাক একটি কসমেটিকস দোকানে চাকরি করি। দোকানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু এখনো বাসের দেখা মেলেনি। তাই বেশি টাকা দিয়ে বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেলে করেই যাবো ভাবছি।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার শিমরাইল ক্যাম্পের টিআই একেএম শরফুদ্দিন বলেন, কী কারণে যানবাহন কম রয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে যানবাহনগুলো নির্বিঘ্নেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারছে।