দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘিরে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাও করার মতো কর্মসূচি আসতে পারে। ইতোমধ্যে নতুন কর্মসূচি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন বিএনপি নেতারা।
গত বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। পরের দিন রাতে বসেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। উভয় বৈঠকেই নতুন কর্মসূচির বিষয়ে কথা হয়। কথা হয় তিন দফায় পালিত অবরোধ কর্মসূচি নিয়েও। বৈঠকে বিএনপির অনেক নেতা বলেন, অবরোধের মাধ্যমে ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলনের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর তা বাতিলের দাবি জানিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দুই দিনের সময় দেওয়া হবে। এর মধ্যে দাবি না মানলে ইসিসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে ফিরবেন আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, দেশ-বিদেশের কেউই বিশ্বাস করেন না যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সম্প্রতি দুই উপনির্বাচনেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল হতে পারে। মূলত তফসিল ঘোষণার ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী আন্দোলনের তীব্রতা ও সময়সূচি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আন্দোলন যেখানে গেছে, যেভাবে জনগণ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছে, তাতে দিনে দিনে আন্দোলনের তীব্রতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, ২৮ অক্টোবর
থেকে গতকাল পর্যন্ত তাদের অন্তত ১০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ২০৮টি।
বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এসব মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া। সরকারের পতন ঘটাতে না পারলে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ।
বিএনপি অনেক নীতিনির্ধারক মনে করেন, আন্দোলন অব্যাহত থাকলে সরকার ঘরে-বাইরে আরও চাপে পড়বে। সে ক্ষেত্রে সরকার সহজে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো বিতর্কিত নির্বাচন করতে পারবে না। বিষয়টি মাথায় রেখে আন্দোলন আরও জোরদার করতে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে বলেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, তফসিলের পর চলমান ধরপাকড় নিয়ে ইসির ভূমিকা কেমন দাঁড়ায়, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তফসিলের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাজে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে ইসি। তাই তফসিলের পর তা বাতিল করার দাবি তোলা হবে। তখন আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা রাজপথে বের হয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবেন। তখনো যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগের মতো গণহারে বিরোধীদের গ্রেপ্তার করে, তাহলে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তফসিলের পর সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক করতে পারবে। তখন নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে ইসিকে। ইসির আচরণও যদি সরকারের মতো হয়, তাহলে প্রমাণ হবে দেশে একতরফা নির্বাচনই হতে যাচ্ছে।