সীমিত ব্যাংকিংয়ের মধ্যেও নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে ব্যাংকগুলোতে। এ সঙ্কট মেটাতে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে বন্ধ রাখা রেপো অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করার পদ্ধতি আবারো চালু করা হয়েছে। একই সাথে ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে লেনদেন করতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার অর্থাৎ কলমানি মার্কেটও আবার চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল ব্যাংকগুলোকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, টানা ১০দিন সাধারণ ছুটির মধ্যে সীমিত আকারে ব্যাংকিং চালু রেখেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে প্রথমে শুধু টাকা উত্তোলন, জমা দেয়া ও বৈদেশিক বাণিজ্য চালু রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এজন্য সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ব্যাংক লেনদেন চালু রাখা হয়। কিন্তু এ সময়ে টাকা জমা দেয়ার চেয়ে টাকা উত্তোলনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর পরেই চেক জমা দেয়া ও নেয়া এবং এক অ্যাকাউন্ট থেকে আরেক অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেনের অনুমোদন দেয়া হয়। এতেও সঙ্কট দূর হচ্ছিল না। বরং নগদ টাকার প্রবাহ কমে যাওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। অনেক ব্যাংক গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে পারছিল না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তাদের ধারণা ছিল সীমিত পর্যায়ে ব্যাংকিংয়ে তেমন টাকার সঙ্কট হবে না। বরং সম্ভাব্য এ সঙ্কট মোকাবেলায় টানা ১০ দিন ছুটির আগের দুই দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কোটি নগদ টাকা সরবরাহ করা হয় ব্যাংকগুলোকে। তখন সীমিত পর্যায়ে ব্যাংকিং চালু রাখায় গ্রাহকের যে অসুবিধা হবে তা মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথগুলো সার্বক্ষণিক চালু রাখা ও এতে পর্যাপ্ত টাকার নোট সরবরাহ করতে বলা হয়।
কিন্তু এর পরেও ব্যাংকগুলোতে টাকার সঙ্কট হওয়ার অর্থ হলো গ্রাহক বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যাংক থেকে উত্তোলন করছেন। যে পরিমাণ টাকা উত্তোলন করছেন সেই পরিমাণ অর্থ জমা দিচ্ছেন না। এ কারণেই এ সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে। এ সঙ্কট মেটানোর জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বন্ধ রাখা সব ধরনের টাকার প্রবাহ বাড়ানোর ব্যবস্থা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কট হলে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে থাকে। একে কলমানি মার্কেট বা আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার বলা হয়। এ বাজার থেকেই ব্যাংকগুলো তাদের নিজেদের সঙ্কট মোকাবেলা করে থাকে। কলমানি মার্কেটও টাকার চাহিদা বেশি থাকলে অর্থাৎ ধর দেয়া ব্যাংকগুলোর চেয়ে ধার নেয়া ব্যাংকগুলোর পরিমাণ বেড়ে গেলে তখন কলমানি মার্কেটে টাকার টান পড়ে।
ওই সময়ই নগদ টাকার সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো তাদের চাহিদা পূরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাতে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মুদ্রাবাজারের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে নগদ টাকার জোগান দিয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর এ ধার নেয়াকে ব্যাংকিং ভাষায় রেপো বলে। সাধারণত ব্যাংকগুলোর হাতে যে বিল ও বন্ড থাকে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে চাহিদা অনুযায়ী নগদ টাকা ধার নিয়ে থাকে। এজন্য ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংককে একটি নির্ধারিত হারে সুদ দিয়ে থাকে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, সীমিত পর্যায়ে ব্যাংকিং এ দু’টি সুযোগ বন্ধ ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ দু’টি সুযোগ আবারো খুলে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আন্তঃব্যাংক লেনদেনের জন্য সম্ভাব্য তারল্যঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য সীমিত আকারে পুনঃক্রয় চুক্তি ব্যবস্থা অর্থাৎ রেপো এবং আন্তঃব্যাংক কলমানি মার্কেট চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগ্রহী ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের সিকিউরিটিজ শাখায় সাড়ে ১২টার মধ্যে রেপোর আবেদন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে কলমানি মার্কেটের লেনদেনের তথ্য প্রতিদিন সাড়ে বারোটার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পাঠাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার সঙ্কট অনেকাংশেই কেটে যাবে বলে তারা মনে করেন।