গোয়েন্দা পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘শিশু বর্ষা ও নুরী চিৎকার করে কাঁদছে তার মায়ের মুক্তির জন্য। গোয়েন্দা পুলিশ শিশুদের বাবাকে না পেয়ে তার মাকে ধরে নিয়ে গেছে। এমনিভাবে ছয় বছরের শিশু সিয়াম বুকফাটা আর্তনাদ করছে তার কারাবন্দী বাবা আবুল কালামের জন্য।’
বুধবার বিকেলে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, ‘আব্দুল হাইয়ের তিন সন্তানকে কারান্তরীণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে এক ছেলের হয়েছে ১০ বছর সাজা। আরেক ছেলেকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সারাদেশে চলছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে মাতম আর মর্সিয়া। কান্নার আহাজারিতে এক বিষন্ন গুমোট অবস্থা বিরাজ করছে জন-সমাজে। হাতিরঝিলের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনকে বর্বোরচিত আক্রমণ করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ক্যাডাররা। প্রচণ্ড মারধরের পর রক্তাক্ত খোকনকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আর সশস্ত্র আওয়ামী ক্যাডাররা একই দলে পরিণত হয়েছে। এদের কাজ শুধুমাত্র সরকারের আক্রোশ বাস্তবায়ন করা।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার বর্ণনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। বিএনপির নেতাকর্মীরা এক কঠিন সময় পার করছে। অনেকটা দেশ ছাড়া উদ্বাস্তুর মতো। সহায় সম্বলহীন নিঃস্ব তারা। বিগত ১৫ বছরে অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, চাকুরি থাকলেও কোনো পদোন্নতি পায়নি, ব্যবসা-বাণিজ্য কেড়ে নেয়া হয়েছে, দোকান-পাট, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর ওপর এখন ঘর ছাড়া, বাড়ি ছাড়া, এলাকা ছাড়া নেতাকর্মীদের ধান ক্ষেতে মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দৃশ্য দেশবাসী দেখেছে, সুপারির বাগান, ফলের বাগান এবং রান্না ঘরের লাকড়ি রাখার স্তুপের মধ্যে কোনোরকমে জায়গা করে রাত পার করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাষ্ট্র এখন তার নাগরিকদের জীবন আর সম্পদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয় না। বিএনপির নেতাকর্মীদের যেন মানবাধিকার থাকতে নেই। সংবিধানে যতটুকু মানবাধিকার আছে ওই অধিকার প্রয়োগেরও অধিকার নেই বিএনপির নেতাকর্মীদের। হত্যা, লুণ্ঠন ও বন্দী হওয়াই যেন তাদের ভাগ্যের লিখন। সরকারের নীতিই যেন হয় আমাকে সমর্থন করো, না হলে নিশ্চুপ থাকো। আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর উগ্র-প্রচারের বিরুদ্ধে টু-শব্দ করতে পারবে না। লুণ্ঠন আর হত্যা যেন কোনো অমানবিক কাজ নয় ক্ষমতাসীনদের কাছে। সরকার লেলিয়ে দিয়েছে তার পেটোয়া বাহিনীকে, যারা মনে করে লুটপাট, সহিংসতা ও হত্যা যেন তাদের দলীয় কর্তব্য। যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যে সহিংস আক্রমণের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে আসছে সে কারণেই তাদেরকে ধন-সম্পত্তি আর লুটপাটের সুযোগ করে দেয়াটা যেন প্রত্যক্ষ পারিতোষিক।’
রিজভী বলেন, ‘আজ সকাল ৬টা থেকে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে, যা আগামীকাল ভোর ৬টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এবং আগামীকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করা হবে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো দূর্জয় গতিতে জীবন বাজি রেখে এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিগুলো পালন করছে। সরকারের রক্তচক্ষু, চোখ রাঙানী, গ্রেফতার অভিযান, নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের মধ্যেও অকুতোভয়ে নেতা-কর্মীরা তাদের দুরন্ত মিছিল অব্যাহত রেখেছে।’
সরকারের পদত্যাগসহ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে, আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ এবং বিএনপির মহাসচিবসহ সকল নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে চলমান অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি সফল করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান রিজভীর।