ভূপৃষ্ঠে শুধু একটি বিষয়ে সবাই একমত। পরস্পরের মধ্যে নেই মতের অমিল। নেই পক্ষ-বিপক্ষের বাদানুবাদ। আর সেটি হলো মৃত্যু, যা এক অনিবার্য সত্য। প্রতিটি প্রাণীর জন্মের পরিসমাপ্তি হলো মৃত্যু। মৃত্যুর মাধ্যমেই সাঙ্গ হবে ভবের খেলা। আজ হোক বা কাল মৃত্যু সুনিশ্চিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘প্রত্যেকে প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।’ (সূরা আল ইমরান-১৮৫)
মানুষ অঢেল ধনসম্পদের মালিক হলে নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবতে শুরু করে। নিজেকে প্রতাপশালী মনে করে। তার সম্মুখে আগত সব সমস্যার সমাধান সে তার ক্ষমতাবলে করতে চায়। সম্পদশালী ব্যক্তি এই চিন্তা করে যে, তার বিশাল ধনভাণ্ডার তাকে অমর করে রাখবে। তাই সে এগুলো খুব সযতেœ সংরক্ষণ করে। এমন ব্যক্তি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘সে ধারণা করে তার ধনসম্পদ তাকে চিরস্থায়ী করে রাখবে।’ (সূরা হুমাজাহ-৩) অর্থাৎ তার আচরণ দেখে মনে হয়, এ সম্পদ কখনো তার থেকে পৃথক হবে না। আসমানি বা পার্থিব যেকোনো বিপদাপদ থেকে তাকে রক্ষা করবে।
দুনিয়ার প্রতি সীমাহীন আসক্তিতে মানুষের অন্তরে মৃত্যুর ভয় প্রবেশ করে। তখন সে মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ায়। সুবিশাল অট্টালিকা আর প্রাসাদ নির্মাণ করে সেখানে আশ্রয় নেয় মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য। অথচ সে বেমালুম ভুলে যায়, মৃত্যু যে এক অনিবার্য সত্য। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘আপনি বলুন, তোমরা যেই মৃত্যু থেকে পলায়ন করছ, তা অবশ্যই তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করবে।’ (সূরা জুমুয়াহ-৮)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমরা যেখানই থাকো না কেন, মৃত্যু তোমাদের পেয়ে যাবে, যদিও সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করো।’ (সূরা নিসা-৭৮)
মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং বনি আদমের ওপর তা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হলো, মৃত্যু থেকে না পালিয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। দুনিয়ার লোভ-লালসা পরিহার করে পরকালের চিরস্থায়ী সুখ-সমৃদ্ধির কাজে মনোনিবেশ করা। অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রাসূলের দেখানো পথে চলা। দুনিয়ার আসক্তি কমানোর সহজ পদ্ধতি হলো, মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা বেশি পরিমাণে জীবনের স্বাদ হরণকারী অর্থাৎ মৃত্যুর স্মরণ করো।’ (তিরমিজি-২৩০৭, ইবনে মাজাহ-৪২৫৮)
ধনসম্পদের প্রাচুর্য থাকলে দুনিয়ার মানুষ তাকে সম্মান করে। বুদ্ধিমান বলে জানে। অথচ আখিরাত ভুলে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁঁকে পড়াই সবচেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতা ও বোকামি। কারণ সে চিরস্থায়ী সুখ-সমৃদ্ধির বদলে ক্ষণস্থায়ী সুখের সন্ধানে বেরিয়েছে, যে সুখ-শান্তি ক্ষণিকের। হজরত ইবনে উমার রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাথে ছিলাম। এমন সময় এক আনসারি নবী সা:-এর কাছে এসে তাকে সালাম দিলো। অতঃপর বলল, হে আল্লাহর রাসূল! মু’মিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম কে? তিনি বললেন, ‘স্বভাব-চরিত্রে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অধিক উত্তম।’ সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, মু’মিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান কে? তিনি বললেন, ‘তাদের মধ্যে যারা মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তারাই সর্বাধিক বুদ্ধিমান।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ-৪২৫৯)
লেখক :
শিক্ষার্থী, ফতোয়া বিভাগ, জামিয়া আরাবিয়া মাখযানুল উলুম, ময়মনসিংহ