পবিত্র কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘নিশ্চয়ই সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সূরা আনকাবুত-৪৫)
সালাত আদায় তথা সব ইবাদত করতে হবে প্রিয় নবী মুহাম্মদ সা:-এর মত ও পথ অনুসরণের মাধ্যমে; অন্য কারো তরিকা বা খেয়ালখুশি মতো নয়।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে ঈমানের পরই সালাতের স্থান। যার সালাত সুন্দর হবে সে সিরাতুল মুস্তাকিমে নিশ্চয়ই অগ্রগামী। দুনিয়া আখিরাত কবর হাশরে সে-ই তো সফল। সালাতের ব্যাপারে সুবহানাল্লাহ কত চমৎকার প্রশ্ন উম্মতের প্রতি! আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘যদি তোমাদের কারো বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার দেহে কোনো ময়লা থাকবে?’
উপরোক্ত প্রশ্নের মাধ্যমে আল্লাহর হাবিব সা: বোঝাতে চেয়েছেন, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে তার কোনো পাপ থাকতে পারে না।
এছাড়াও তিনি ইহসানের সাথে ইবাদত করার জন্য তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ‘ইহসান হলো, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তাঁকে দেখতে পাচ্ছ, তা সম্ভব না হলে এমন অনুভূতি নিয়ে ইবাদত করবে যেন তিনি তোমাকে দেখছেন।’ (বুখারি)
ইহসান অন্য অর্থেও ব্যবহার করা হয়। পবিত্র কুরআনুল কারিমে দয়ালু আল্লাহ তায়ালা ইহসান সম্পর্কে বলেছেন- ‘দয়া করো, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি করেছেন।’ (সূরা কাসাস-৭৭)
আল্লাহর হুকুম পালন করার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সা:-এর অনুকরণ-অনুসরণ মু’মিনের জন্য আবশ্যক। এর কোনো ব্যত্যয় করা যাবে না। এ বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা জরুরি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোনো পথে চলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।’ (মুসলিম-২৬৯৯) পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন- ‘(হে নবী) তুমি বলো, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবাসো তাহলে আমার অনুসরণ করো। আমাকে ভালোবাসলে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন।’ (সূরা আলে ইমরান-৩১)
এর পরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন- ‘তুমি আরো বলো, তোমরা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের কথা মেনে চলো। (এ আহ্বান সত্ত্বেও) তারা যদি (এ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয় (তাহলে তুমি জেনে রেখো) আল্লাহ তায়ালা কখনো কাফেরদের পছন্দ করেন না।’ প্রত্যেক মু’মিনের অন্তরে আল্লাহর ভয়-ভালোবাসা জাগরূক রাখতে হবে এবং তিনিই একমাত্র আরাদ্ধ।
‘‘আল্লাহর ইচ্ছার ওপর সবকিছু নির্ভরশীল। কেননা, তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেন। তিনি সবকিছু জানেন। দুনিয়া-আখিরাতে সবকিছুরই চূড়ান্ত পরিণতি তার হাতে নিবদ্ধ। এ বাস্তব সত্য যদি মানুষের মনে বদ্ধমূল থাকে, তাহলে মানুষ তার কোনো বিপদ-মুসিবতেই উদ্বিগ্ন হতে পারে না, কোনো সুখকেই সে বড় কিছু মনে করতে পারে না, কোনো কাক্সিক্ষত জিনিস হারিয়ে সে দুঃখিত হতে পারে না। কেননা, এসব জিনিস নির্ধারণের ব্যাপারে তাদের কোনো হাত নেই, হাত শুধু আল্লাহর। তবে এ কথার অর্থ এই নয় যে, মানুষ তার বিবেকবুদ্ধির চর্চা, ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ ও চেষ্টা-সাধনা বন্ধ করে দেবে। এর অর্থ এই যে, মানুষ তার সাধ্যমতো চিন্তা-গবেষণা, পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করার পর তার ভাগ্যে যা ঘটবে, তা সর্বান্তকরণে মেনে নেবে। কেননা মানুষের হাতে শুধু চেষ্টা-সাধনার ক্ষমতাই রয়েছে। এরপর সবকিছু আল্লাহ তায়ালার হাতে। তার সৃষ্টিতে ও ক্ষমতায় কেউ তার শরিক নেই। আল্লাহ তায়ালা তাদের সব শিরকের ঊর্ধ্বে ও তা থেকে পবিত্র। ‘তিনিই সেই আল্লাহ তায়ালা যিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।’ সুতরাং তার কাছেই সবাইকে ফিরে যেতে হবে, কেউ পালাতে পারবে না। সুতরাং তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যখন কেউ যেতে পারে না তখন তার সাথে অন্যকে শরিক করার কী যুক্তি থাকতে পারে।’’ (তাফসির ফি জিলালিল কুরআন)
যারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে পাপাচারে লিপ্ত হয় এবং নশ্বর এ দুনিয়াতে অহঙ্কার প্রদর্শন করবে তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। আর তা বড়ই ভয়ঙ্কর। সেখানে তাদের পুঁজ মিশ্রিত নোংরা পানি খেতে দেয়া হবে। জ্বলতে হবে ভয়াবহ আগুনে। অন্য দিকে যারা ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত, ক্ষমা ও মনোরম জান্নাত। তারা হবে আল্লাহর মেহমান। আল্লাহ তায়ালা তাদের ভালোবাসবেন, আর আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা পেতে হলে আল্লাহর হাবিব মুহাম্মদ সা:-এর ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। কারণ আল্লাহর রাসূল সা:-কে ভালোবাসাও ইবাদত এবং তার অনুকরণ-অনুসরণ আখিরাতের চলার পথে বড় ধরনের পাথেয়। হাদিসে রয়েছে, ‘যে যাকে ভালোবাসে তার সাথে তার হাশর হবে।’ এ বিষয়ে আনাস রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, ‘এক লোক রাসূলুল্লাহ সা:-কে জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামত কখন হবে? রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘তুমি এ জন্য কী তৈরি করেছ?’ লোকটি বলল, আমি এর জন্য তেমন সালাত-সিয়াম ও সাদকা করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালোবাসি। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘তুমি তার সাথেই থাকবে যাকে তুমি ভালোবাসো।’ (বুখারি-৬১৭১)
লেখক :