নিখোঁজের এক মাস পর প্রেমিকার বাড়ির উঠানের গভীর গর্ত থেকে প্রেমিকের গলা কাটা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে উঠানের ১২ ফুট গর্ত থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহতের নাম পিকুল বিশ্বাস (৩৫)। তিনি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার চৌগাছি গ্রামের উকিল বিশ্বাসের ছেলে।
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মহেশপুর গ্রামের কাজী গোলাম মোস্তফার ছেলে মোশারফ হোসেন দীর্ঘদিন বিদেশ থাকায় পিকুল বিশ্বাসের সাথে তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানার (২৮) পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। বছরখানেক আগে মোশারফ দেশে ফিরে এলেও তার স্ত্রী’র সাথে পিকুলের সম্পর্ক থেকেই যায়। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার শালিশী বৈঠক হয়। কিন্তু পিকুল ও রাজিয়ার পরকীয়া সম্পর্ক চলতে থাকে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী বিচ্ছেদের পর্যায়ে পৌঁছায়। একপর্যায়ে স্বামী মোশারফ পিকুলকে তার সামনে হাজির করার জন্য স্ত্রীকে শর্ত দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ মার্চ রাতে স্বামী বাড়িতে নেই বলে সুকৌশলে রাজিয়া প্রেমিক পিকুলকে তার বাড়িতে আসতে বলে। বাড়িতে আসার পর প্রেমিকা রাজিয়া স্বামীর কথা মতো পিকুলকে দুধের সাথে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে খাওয়ায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পিকুল ঘুমিয়ে পড়লে রাজিয়া তার স্বামীকে ডেকে এনে খাটের উপর ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো দা দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী উঠানের টিউবওয়েলের পাশে খোঁড়া ১২ ফুট গভীর গর্তে বিছানাপত্র ও ব্যবহৃত মোবাইল সেটসহ পিকুলের লাশ মাটি চাপা দেয়।
এর আগে ২ মার্চ পিকুল তার সিঙ্গাপুরগামী এক আত্মীয়কে বিমানে তুলে দিতে ঢাকায় যায়। ৩ মার্চ দুপুর পর্যন্ত পরিবারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ ছিল তার। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ না পেয়ে ভায়রা মামুনুর রশীদ গত ৭ মার্চ গাজীপুরের কাশিমপুর থানায় জিডি করেন (যার নং ২৪১/২০২০)।
জিডির সূত্র ধরে পিকুলের মোবাইল নাম্বার ট্র্যাকিং করে পুলিশ রাজিয়া ও তার স্বামী মোশারফকে আটক করে। আটকের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পিকুলকে হত্যার মূল ঘটনা স্বীকার করে। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক মাগুরা পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজোয়ান শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইয়াছিন কবীরের উপস্থিতিতে শ্রীপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় শুক্রবার রাত ১টার দিকে ১২ ফুট মাটির নিচ থেকে পিকুলের লাশ উত্তোলন করেন। রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি মাগুরা মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মাগুরা পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজোয়ান জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মোবাইল নাম্বার ট্র্যাকিং করে ঘটনায় জড়িত রাজিয়া ও তার স্বামী মোশারফকে আটক করা হয়। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীর পর তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।