আল্লাহ রাহমানুর রাহিম হাজারো নিয়ামতে ভরা এই দুনিয়ায় কিছু দুঃখ-বেদনা, ভালো-মন্দ দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে এই পৃথিবীতে পবিত্র জীবন দান করবেন এবং আখিরাতের অনন্ত জীবনে দান করবেন অফুরন্ত কল্যাণময় মনোরম জান্নাত। আর যারা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবে তাদের জন্য থাকবে দুনিয়ায় অশান্তি ও আখিরাতে জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ড। হায় কত নিকৃষ্ট জাহান্নামের শাস্তি! কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ বলেন- ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জানমাল ও ফলফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সূরা বাকারা-১৫৫)
সবধরনের সমস্যা-সঙ্কটে ধৈর্য ধারণ মু’মিনের একটি বড় গুণ। রাসূলুল্লাহ সা: মু’মিন সম্পর্কে বিরাট তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন; তিনি বলেছেন- ‘মু’মিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সব কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মু’মিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শুকরিয়া আদায় করে আর অসচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসিবতে পতিত হলে ধৈর্য ধারণ করে, সবই তার জন্য কল্যাণকর।’ (মুসলিম-৭৩৯০)
কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তারা (মু’মিনরা) কোনো মুসিবতে পড়লে বলে- ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। অর্থাৎ আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবো।’ (সূরা বাকারাহ-১৫৬) এ দুনিয়ায় সুস্থতা যেমন আল্লাহর দেয়া একটি বড় নিয়ামত, তেমনি অসুস্থতার মধ্যেও নিহিত আছে অনেক কল্যাণ। কিন্তু আমরা জানা-বোঝার ব্যাপারে অজ্ঞতার কারণে অকপটে তা মেনে নিতে পারি না। এ জন্য আল্লাহর বাণী পবিত্র কুরআনের পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালার হাবিব রাসূলুল্লাহ সা:-এর হাদিস থেকে অবশ্যই আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: এক রোগীকে দেখার জন্য তার ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন তিনি বলেন, ‘কোনো ক্ষতি নেই, ইনশা আল্লাহ গুনাহ থেকে তুমি পবিত্রতা লাভ করবে।’ (বুখারি-৫৬৬২)
আল্লাহর রাসূল সা:-এর অসুস্থতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে উম্মুল মু’মিনিন আয়েশা রা: বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লøাহ সা:-এর চেয়ে বেশি রোগযন্ত্রণা ভোগকারী অন্য কাউকেই দেখিনি।’ (বুখারি-৫৬৪৬)
মনে রাখা দরকার, রোগবালাই হলে চিকিৎসার পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালার ওপর নির্ভর করে আরোগ্যের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া-প্রার্থনা করতে হবে। কেননা অসুস্থতা আল্লাহ তায়ালাই দেন এবং সুস্থতা তিনিই দান করেন। আর মু’মিনের কর্তব্য হলো আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভরসা করা। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন তাকে তিনি দুঃখ-কষ্টে পতিত করেন।’ (বুখারি-৫৬৪৫)
আমাদের দেশে প্রচলিত আছে, কোনো মুসলিম মৃত্যুবরণ করলে কেবল তখনই আমরা বলি- ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ আসলে শুধু মৃত্যুর সংবাদে নয়; যেকোনো দুর্যোগ-দুঃসংবাদে এ দোয়া পড়তে হয়।
কষ্টের সময় যারা ধৈর্য ধারণ করে এবং আল্লাহমুখী হয় তাদের জন্য রয়েছে রহমত, বরকত ও মাগফিরাত। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘আজ আমি তাদেরকে পুরস্কৃত করলাম তাদের ধৈর্য ধারণের কারণে, আজ তারাই তো সফলকাম।’ (সূরা মু’মিনুন-১১১)
উম্মে সালামা রা: বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছি, ‘মু’মিন ব্যক্তি যখন কোনো বিপদ-আপদে আক্রান্ত হয় তখন আল্লাহ তাকে বলতে বলেছেন- ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ উল্লিখিত দোয়া পাঠ করলে তখন আল্লাহ তাকে ওই মুসিবতের উৎকৃষ্ট বদলা এবং আগের চেয়ে উত্তম বিকল্প দান করেন।’ (মুসলিম)
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন-এর অর্থ হলো- ‘আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তারই দিকে ফিরে যাবো।’
মানুষের কাছে কিছু চাইলে তারা বেজার হয় আর আল্লাহর কাছে চাইলে তিনি খুশি হন। আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার প্রশংসা করলে তিনি বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে নিয়ামত বাড়িয়ে দেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য নাজাতের পথ তৈরি করে দেন। আর তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই।’ (সূরা তালাক : ২-৩)
সবধরনের বিপদ-বিপর্যয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছেই সাহায্য কামনা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বড়ই দয়ালু ও মহাদাতা। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য তার কাছেই হাত পাততে হবে। আল্লাহ তায়ালাকে ডাকলে তিনি সতত সাড়া দেন। তাই তো তিনি কুরআনুল কারিমে বলেছেন- ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো; আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সূরা বাকারাহ-১৫২)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্মরণ করে এবং যে ব্যক্তি স্মরণ করে না তাদের উপমা হচ্ছে জীবিত ও মৃতের মতো। (বুখারি-২০৮)
লেখক :
সাংবাদিক