শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল করা হবে: সালাহউদ্দিন আহমদ জামায়াতসহ আরও ১২ দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ সোমবার গণতান্ত্রিক উত্তরণে বাংলাদেশকে সমর্থন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য উপদেষ্টার হুশিয়ারিতেও দাম কমেনি পেঁয়াজের পি এস মাহসুদ উদ্বোধন: পর্যটনে যুক্ত হলো শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার রাজনীতিতে ভোটের হাওয়া, স্বস্তির আশা অর্থনীতিতে বিবিসিকে শেখ হাসিনা: আমি মানবতাবিরোধী অপরাধ করিনি সন্তানদের প্রকৃত শিক্ষায় গড়ে তুলতে হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টাvvvvvvvvvv বিচারকের ছেলে হত্যাকাণ্ড: আরএমপি কমিশনারকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ খতমে নবুওয়ত সম্মেলনে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতারা

নারায়ণগঞ্জে জ্বর-ঠাণ্ডায় সঙ্গীতশিল্পীর মৃত্যু

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০২০
  • ২৯৩ বার

সোমবার রাত প্রায় দুইটা। জ্বর-সর্দিসহ প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে মারা যান নারায়ণগঞ্জের সংগীতাঙ্গনের অত্যন্ত প্রিয়মুখ বেজ গিটারিস্ট রাকিব ওরফে হিরু। মৃত্যুর পরপরই তার লাশ চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে এনে ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। কোনো খাট ছিল না। কোনো আগরবাতি জ্বলছিল না। এমনকি একটা মানুষও ছিল না লাশটির কাছে! সারারাত লাশটি রাস্তায়ই পড়েছিল।

এর আগে তার শারীরিক অবস্থার যখন অবনতি হয় তখন তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন। অ্যাম্বুলেন্স আসে। কিন্তু রোগীর জ্বর-সর্দি এবং শ্বাসকষ্ট রয়েছে অর্থাৎ তার করোনার উপসর্গ! এমনটা জানতে পেরে অ্যাম্বুলেন্স চালকও গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে তাকে আর হাসপাতাল পর্যন্ত নেয়া যায়নি। ডাক্তার, ওষুধ, চিকিৎসার অভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই ভীষণ রকম যন্ত্রণায় ছটফট করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন অনেকের প্রিয় বেজ গিটারিস্ট হিরু।

হিরুরা থাকতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ কৃষ্ণচূড়া মোড়ের রতন ও ইকবালের বাড়িতে। দেড় বছরের ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে এখানেই বসবাস করতেন তিনি। সাথে হিরুর বোনও থাকতেন। পরিবারের বাকি সব সদস্যরা ঢাকায় বসবাস করেন। পরিবারের কোনো পুরুষ লোক ছিল না। এলাকাবাসীও এগিয়ে আসেনি। যার কারণে বেওয়ারিশ লাশের মতোই হিরুর লাশটি রতভর পড়েছিল রাস্তার ধারে।

এদিকে রাস্তায় লাশ পড়ে থাকার খবর পৌঁছায় সিটি করপোরেশনের কাছে। প্যানেল মেয়র-১ আফসানা আফরোজ বিভা ঘটনাস্থলে ছুটে যান তার টিমসহ স্থানীয় থানা পুলিশ নিয়ে। তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় লাশ দাফনের উদ্যোগ নেন।

এই প্যানেল মেয়রের ভাষ্য মতে, বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক।

আফসানা আফরোজ বিভা জানিয়েছেন, হিরু গত দুই বছর ধরেই স্কিনজনিত রোগে ভুগছিলেন। এরমধ্যে গত ২৬ মার্চ থেকে তার জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয়। পরে শহরের একজন প্রাইভেট ডাক্তারকে দেখালে বেশ কিছু পরীক্ষা করানো হয়। এতে তার ফুসফুসে পানি জমা ছিল বলে চিকিৎসকেরা জানায়। এবং ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়ে ওষুধ খেতে বলেন, এতেই সেরে যাবে। কিন্তু জ্বর, সর্দি আর শ্বাসকষ্ট না কমায় তার পরিবার এরমধ্যে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে চিকৎসকের ভর্তি না নিয়ে পুনরায় ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়ে তাকে ছেড়ে দেন।

তিনি আরো জানান, সোমবার তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আরো প্রকট হয়। এরমধ্যে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি বাড়িতেই মারা যান। পরে তার লাশ বাড়ির বাইরে এনে রেখে দেয়া হয় এবং লাশের কাছে ভয়ে আর কেউ আসেনি। সারারাত লাশটি সেখানেই পড়েছিল। সকালের দিকে খবর পেয়ে স্থানীয় থানা পুলিশ, এবং আমার টিমসহ ঘটনাস্থলে যাই। সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এদিকে হিরোর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, সোমবার রাতে হিরোর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ফের ঢাকায় নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করেন। হিরুকে বাইরে আনা হয়, অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোরও প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগী- এমনটা শুনে করোনা আতঙ্কে চালক পালিয়ে যায়। এরপরই তিনি মারা যান। ফলে তার লাশ আর বাড়িতে না ঢুকিয়ে গেটের কাছেই ফেলে রাখা হয়।

এদিকে, একটি পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, হিরুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তার পরিবার। কিন্তু এলাকাবাসী প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে দিবে না এবং বের হতেও দিবে না জানিয়ে বাধাও দিয়েছিলেন। তবে, এ অভিযোগটি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) তরিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। একজন প্যানেল মেয়রও ছিলেন। আমি তার মায়ের সাথে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর জন্য হিরুকে উঠানো হচ্ছিলো। এরমধ্যে চালক ও অ্যাম্বুলেন্সে থাকা অন্যরা বলছিলেন সে মারা গেছে তাকে আর ঢাকা নিয়ে কী হবে। এরপরই লাশ বাড়ির কাছে ফেলে রেখেছিল। করোনা আতঙ্কে কেউ আর কাছে আসেনি। তার লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেছে সিটি করপোরেশন। সেখানে পুলিশের টিম রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com