যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বকে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। মন্ত্রী সভার সদস্য হয়ে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আগে একটি খেলার প্রতি আমার বিশেষ নজর ছিল। এখন আমি দেশের সবখেলার দায়িত্বে। প্রতিটি খেলার উন্নতি করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। সব খেলা না হলেও কয়েকটি খেলার উন্নতি করাও বেশ চ্যালেঞ্জিং কাজ। তবে যেহেতু খেলা, তাই সম্ভব।’ ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিলেও এখনই ক্রিকেট বোর্ড ছাড়ছেন না পাপন। জিানিয়েছেন চাইলেই এখন বিসিবি ছাড়তে পারছেন না তিনি।
নাজমুল হাসান পাপনের আগে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল প্রতিমন্ত্রীর কাঁধে। জাহিদ আহসান রাসেল ছিলেন এই মন্ত্রণালয়ের সবশেষ প্রতিমন্ত্রী। পাপনকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদানের মধ্য দিয়ে ৩৪ বছর পর এ মন্ত্রণালয় পেলো একজন পূর্ণ মন্ত্রী। সর্বশেষ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন জাতীয় পার্টির সরকারের আমলে নিতাই রায় চৌধুরী ১৯৯০ সালে। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও দুইবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় উপদেষ্টারা এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। নাজমুল হাসান পাপন ও নিতাই রায় চৌধুরীর আগে এ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, শামসুল হুদা চৌধুরী, জাকির খান চৌধুরী, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও সুনীল কুমার গুপ্ত। ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকাদের মধ্যে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে প্রথম দায়িত্ব পান সাদেক হোসেন খোকা। তিনি ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও ঢাকা মহানগরী ফুটবল কমিটির কর্মকর্তা ছিলেন।
সাদেক হোসেন খোকার পর ক্রীড়াঙ্গন থেকে দ্বিতীয় মন্ত্রী ছিলেন আরিফ খান জয়। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হন। এরপর আহাদ আলী সরকার, বীরেন শিকদার ও জাহিদ আহসান রাসেল প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়াই। নাজমুল হাসান পাপন আবাহনী ক্লাবের পরিচালক, বিসিবি’র সভাপতির দায়িত্বে এক দশকের বেশি সময়। রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়ে তিনি গত এক দশকে ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম নীতি-নির্ধারক ছিলেন। দেশের সবচেয়ে বড় ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। মন্ত্রিত্ব ও বিসিবি’র সভাপতি পদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো ব্যাপার নেই। চাইলে দুই দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করতে পারবেন পাপন।
তবে তার মন্ত্রণালয়ের অধীনে সব ক্রীড়া ফেডারেশন সেখানে তিনি যদি ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্বেও থাকেন, ক্রিকেটপ্রীতি নিয়ে যেকোনো সময় প্রশ্ন ওঠাও অবান্তর নয়! সেটি নিজেও বিশ্বাস করেন বিসিবি বস। গতকাল জুমার নামাজের পর বনানী কবরস্থানে মা-বাবার কবর জিয়ারত করে সংবাদমাধ্যমকে পাপন বলেন, ‘আইনে কোনো সমস্যা নেই, এটাই হচ্ছে বড় কথা। কথা হচ্ছে, এক সঙ্গে যদি দুটোতে থাকি তাহলে স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে, ক্রিকেটের প্রতি আমার দৃষ্টিটা একটু বেশি। এটা সকলের ধারণা, এটা অস্বাভাবিক কিছু না।’ যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া পাপন জানান, আইসিসি’র কিছু নিয়মকানুন আছে। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার বেশ কিছু কমিটিতে আছেন তিনি। কোথাও আবার চেয়ারম্যান পদেও আছেন। চাইলেই এখন বিসিবি’র পদ থেকে দ্রুত বের হতে পারবেন না। আইসিসি’র নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
নিয়ম না মানায়, সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা ও তার আগে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটকে নিষিদ্ধ করেছিল আইসিসি। পাপন বলেন, ‘এখানে মূলত কয়েকটা ব্যাপার আছে, প্রথম কথা হচ্ছে, ইচ্ছে করলেই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া যায় না এখন। সেটা আমরা জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রেও দেখেছি, দুই বছর তারা প্রায় নিষিদ্ধ, শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও এবার দেখেছি। আমি মনে করি, এমন কিছু তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না, যেটা দেশের ক্রিকেটের ক্ষতি করতে পারে। তবে অপশন কী আছে, সেটা দেখতে হবে। একটা অপশন ওদের সঙ্গে আমার কথা বলতে হবে। এখানে দুটো জিনিস আছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটা হচ্ছে আমাদের মেয়াদ, যেটা সবসময় আইসিসি চায় তাদের ইলেকটেড বডির (নির্বাচিত কমিটি) পূর্ণ মেয়াদটা। আর একটা হচ্ছে আইসিসি’র মেয়াদ।’ বর্তমান কমিটির মেয়াদের আগে বিসিবি’র দায়িত্ব ছাড়লে নতুন করে বোর্ড ডিরেক্টরদের থেকে কেউ দায়িত্বে আসবেন বলেও জানিয়ে রাখলেন পাপন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় একটা হতে পারে আইসিসি’র মেয়াদটা শেষ হয়ে গেলে তখন একটা চিন্তা করে ওদের সঙ্গে কথা বলে বের হয়ে আসার সুযোগ আছে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই এখন যারা বোর্ডের ডাইরেক্টর আছে তাদের মধ্যে থেকে একজন হবে। মানে বাইরে থেকে কারও আসার কোনো সুযোগ নেই।’