শীত বিদায় নিয়ে এসেছে বসন্তকাল। বাতাসে আর্দ্রতা কমে গেছে এবং শুষ্ক আবহাওয়ায় বসন্তের ফুরফুরে বাতাস মনে প্রশান্তি এনে দিচ্ছে। কিন্তু এর ভিন্ন দিকও আছে। শুকনো আবহাওয়ায় নানা ধরনের রোগ-জীবাণু শীতনিদ্রা থেকে জেগে ওঠে এবং বাতাসে ভেসে বেড়াতে শুরু করে। দিন ও রাতের তাপমাত্রায় উল্লেখযোগ্য বৈপরীত্যের কারণেও মানুষের শরীরে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে বয়স্ক ও দুর্বল শরীরের মানুষ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে।
দেখা যাচ্ছে, অন্যান্য বছরের মতো এবারো বসন্তের শুরুতে রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ঘরে ঘরে দেখা দিচ্ছে জ্বর, সর্দি-কাশি। হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের চেম্বারে জ্বর নিয়ে আসা রোগীর ভিড় বেড়েছে ২৫ শতাংশ। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে ৫ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। জ্বরে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা।
এ অবস্থা রাজধানীসহ দেশের প্রায় সর্বত্র। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের একাধিক সদস্য একসাথে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে। শঙ্কা এবার একটু বেশি, কারণ ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারিনি। এখনো অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। আবার নতুন করে করোনাভাইরাসেরও কিছুটা বিস্তার দেখা যাচ্ছে। পত্রিকান্তরের খবরে প্রকাশ, পরীক্ষা করে ২ থেকে ৩ শতাংশ রোগীর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ছে। ক’দিন আগে দু’জন মারাও গেছেন কোভিডে। সে জন্য এবারের বসন্তকালে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
ভাইরাস জ্বর ও শর্দি-কাশি ছাড়াও আরো কিছু সাধারণ রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এ সময়। এর মধ্যে রয়েছে- শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, ডায়রিয়া; এমনকি চর্মরোগও। চিকিৎসকরা বলেন, ঋতু বদলের কারণে বছরে দু’বার, শীতের শুরুতে ও শীতের শেষে অসুখ-বিসুখ বেশি হয়। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু ও দীর্ঘদিন ধরে পুরোনো রোগে ভোগা ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ভাইরাস জ্বর তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে পরীক্ষা করানো উচিত। বিএসএমএমইউর ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা: এ বি এম আবদুল্লাহ একটি দৈনিককে বলেন, জ্বরের সাথে ঘাড় বা শরীরে ব্যথা, উচ্চ তাপমাত্রা, বমি করা বা খাবার খেতে না পারা, তিন দিনের বেশি জ্বর থাকা, শুধু রাতে জ্বর আসা, শরীরে র্যাশ বের হওয়া, চোখ শুকিয়ে যাওয়া, খিঁচুনি ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। একই সাথে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি এবং যারা পুরোনো জটিল রোগে ভুগছেন তাদের বেশি সতর্ক হতে হবে।
চিকিৎসকরা রোগীকে বেশি বেশি পানি পান করানো ও পুষ্টিকর খাবার দেয়ার পরামর্শ দেন। জ্বরের রোগীকে কোনো অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া উচিত নয় বলেও জানান তারা। ঝুঁঁকিপূর্ণ ব্যক্তি যাদের শ্বাসতন্ত্র, হার্ট বা কিডনির রোগ আছে তাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়া প্রতিষেধক টিকা নেয়ার কথাও বলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
মনে রাখা জরুরি, সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখার সুযোগ খুব একটা নেই। বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের ব্যয় সাধারণের সামর্থ্যরে বাইরে। তাই রোগমুক্ত থাকার জন্য ব্যক্তিগত সচেতনতাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো বিকল্প।