মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৬ অপরাহ্ন

‘তোমরা কীভাবে পরীক্ষা দাও আমি দেখে নেব’

বাংলাদেশ ডেইলি অনলাইন:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৭৫ বার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে আট শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম দেখিয়ে ডিসকলেজিয়েট (পরীক্ষা দেওয়ার অযোগ্য) করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার সমাধানে হস্তক্ষেপ কামনা করে গত মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর আবেদন জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা হলেন- গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের কারুশিল্প ডিসিপ্লিনের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর থিসিস ও নন-থিসিস পর্যায়ের আট শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন- একই ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মনির উদ্দিন আহাম্মেদ ওরফে টভেল।

স্বারকলিপিতে ওই শিক্ষকের হুমকি সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ‘প্রতি মাসের শেষে আমাদের কাছ থেকে এটেন্ডেন্স খাতায় স্বাক্ষর নেওয়া হয়। শিক্ষকের ওপর আস্থা রেখে আমরা স্বাক্ষর করি। পরবর্তী সময়ে এই স্বাক্ষরের ভিত্তিতে ইচ্ছাকৃতভাবে কম এটেন্ডেন্স দেখিয়ে আমাদের ডিসকলেজিয়েট করা হয়েছে। শুরু থেকেই আমাদের ডিসকলেজিয়েট করার এবং পরীক্ষা না দিতে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। শ্রেণীশিক্ষক বারবার বলতেন, তোমরা কীভাবে পরীক্ষা দাও আমি দেখে নেব।’

শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, মোট ১২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আটজনকে ইচ্ছাকৃতভাবে কম এটেন্ডেন্স দেখিয়ে ডিসকলেজিয়েট করা হয়েছে, যেটা অফিসিয়ালি তাদেরকে কোনোভাবে জানানো হয়নি। নিয়মিত ক্লাস করার পরও এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। শ্রেণীশিক্ষক প্রতিদিন ১২টা থেকে ১টার মধ্যে ডিপার্টমেন্টে আসেন, যেখানে তিনি তাদের সাড়ে নয়টা থেকে ক্লাসে থাকতে বলতেন এবং বিভিন্ন কর্মচারী ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের থেকে শুনে তার ভিত্তিতে এটেন্ডেন্স দিতেন। এই নিয়মের ফলে শিক্ষার্থীরা অনেকেই ক্লাসে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও অনুপস্থিত হিসেবে চিহ্নিত হয়।

তারা আরও বলেন, গোপনে ও মাত্র দুদিন সময় দিয়ে চারজন শিক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ করানো হয়েছে। বাকি আটজন শিক্ষার্থীকে এই প্রক্রিয়া থেকে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে, যেটা উনারা ফরম ফিলাপের একদম শেষের দিনে নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করেছেন। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি (রোববার) তাদের পরীক্ষার দিন ধার্য করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক মনির উদ্দিন আহাম্মেদ ওরফে টভেল বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। কারণ হলো, এ রকম অনেক কথাই তারা লিখেছে। আমি হুমকি দেওয়ার কে? ক্লাস তো আরও কয়েকজন শিক্ষক নিয়েছে, আমি তো একা নেইনি? আপনারা অফিসে এসে সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কাগজপত্র সব রেডি আছে। তারা ক্লাস করার পরে মাস শেষে অ্যাটেনডেন্স শিটে স্বাক্ষরও করেছে। সব সাক্ষ্য প্রমাণ আছে। এখন তারা যদি ক্লাস না করে, তাহলে আমি কীভাবে কি করব? দয়া করে উপস্থিতি দেখানোর ক্ষমতা আমার নাই। তাদের সঙ্গে তো আমার ব্যক্তিগত খারাপ সম্পর্কও নাই।’

ডিসিপ্লিনের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, একজন শিক্ষক কী এভাবে কাউকে ডিসকলেজিয়েট করতে পারে? তারা ক্লাসে অনিয়মিত ছিল। নিয়ম অনুযায়ী তারা ডিসকলেজিয়েট হয়েছে।

আপনার কথা অনুযায়ী অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে অনিয়মিত ছিল। তাহলে পূর্বেই আপনারা তাদের সতর্ক করেছিলেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে সভাপতি বলেন, তাদের বহুবার এ বিষয়ে বলা হয়েছে। তারপরও তারা নিয়মিত ক্লাস করেনি।

এখন কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, একাডেমিক কমিটিতেও এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত এসেছে যে, নিয়মানুযায়ী যা হয়, তাই করতে হবে। নিয়মের ব্যতিক্রম করার সুযোগ নেই।

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পদযাত্রা ও আমরণ অনশন করার ঘোষণা দিয়েছে অভিযোগকারী আট শিক্ষার্থী। চারুকলা প্রাঙ্গণ থেকে প্রশাসনিক ভবন অভিমুখে পদযাত্রা করবেন তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com