শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ অপরাহ্ন

সূরা ইখলাসের আলোকে আল্লাহর পরিচয়

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪
  • ৬৮ বার

পৃথিবীতে বিদ্যমান সব ধর্ম ও মতবাদের মধ্যে একমাত্র ইসলামেই ‘সৃষ্টিকর্তার’ সহজ ও যুক্তিযুক্ত সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। আমরা ইসলামের অনুসারীরাই কোনো মাধ্যম ছাড়া, কোনো ধরনের তদবির ছাড়া যেকোনো সময় যেকোনো প্রয়োজনে সরাসরি আমাদের ‘সৃষ্টিকর্তার’ কাছে আমাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো পেশ করতে পারি।
অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের মতো সৃষ্টিকর্তার কাছে কোনো কিছু প্রার্থনার জন্য আমাদেরকে মন্দিরে, গির্জায়, চার্চে ছুটে যেতে হয় না। অর্ধনগ্ন দাড়ি-গোঁফে দুর্গন্ধযুক্ত কোনো মানুষ; অথবা কোনো পাদ্রি কিংবা কোনো পীরের সুপারিশ আমাদের প্রয়োজন হয় না।

পবিত্র কুরআনের অন্যতম ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ সূরা ইখলাসে সৃষ্টিকর্তার মূল ধারণাকে মাত্র চারটি বাক্যে প্রকাশ করা হয়েছে।
‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ বলো, তিনিই আল্লাহ, অদ্বিতীয়।

এই আয়াতে শুধু ‘তিনিই আল্লাহ, অদ্বিতীয়’, এইটুকু বললেও আল্লাহর একত্ববাদ ঘোষিত হয়ে যেত! এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কেন আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতে ‘বলো’ দিয়ে শুরু করলেন? এর শানে নুজুল হচ্ছে- মুশরিকরা রাসূল সা:-কে প্রায়ই আল্লাহ সম্পর্কে বিভিন্ন অবান্তর প্রশ্ন করত। আল্লাহর বংশপরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসার পাশাপাশি, আল্লাহ কি স্বর্ণ রৌপ্য অথবা অন্য কিছুর তৈরি কি না এ রকম অবাস্তব প্রশ্নও করত। তাই এসব অবান্তর-অযৌক্তিক প্রশ্নের জবাব হিসেবে আল্লাহ তায়ালা নিজে-ই রাসূল সা:কে দিয়ে বলিয়েছেন-‘বলো, তিনিই আল্লাহ, অদ্বিতীয়।’

তারপরের আয়াত- ‘আল্লাহুস সামাদ’ আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, সব কিছু তাঁর ওপর নির্ভরশীল। সূরা ইখলাসের দ্বিতীয় আয়াতের এই ‘সামাদ’ শব্দের ওপর যদি আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারি-

তাহলে আমরা কখনোই বিপদে পড়লে কোনো মূর্তি, দেবতা বা পীর/মাজারের কাছে যাবো না। ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তাবিজ, ব্রেসলেট বা কোনো জড়বস্তুর কাছে সাহায্য চাইব না।
অসুস্থ হলে কখনোই চিকিৎসাকেই ‘একমাত্র’ বাঁচার উপায় মনে করে ডাক্তারের কাছে ছুটে গিয়ে বলব না, ‘ডাক্তার সাহেব! আমাকে বাঁচান’।
কারণ অভিধানে ‘সামাদ’ শব্দের অর্থ হচ্ছে- অমুখাপেক্ষী। অর্থাৎ আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেয়ার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কোনো জড়বস্তু বা সৃষ্টির সাহায্য নেয়ার প্রয়োজন নেই। দুনিয়ার কোনো ডাক্তার, পীর, তাবিজের ক্ষমতা নাই আমাদের অসুস্থতা দূর করার। সেই ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই আছে; কেননা তিনি ‘আস-সামাদ’।
১৪০০ বছর আগের মুশরিক থেকে শুরু করে এখনকার সেক্যুলার নাস্তিকদেরও আল্লাহ সম্পর্কে সবচেয়ে কমন এবং অবান্তর প্রশ্ন হচ্ছে-‘সব কিছুর যদি সৃষ্টিকর্তা থাকে তাহলে আল্লাহর সৃষ্টিকর্তা কে?’

এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে- কেউ না। ‘লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ’।
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি।

বিশেষ করে খ্রিষ্টানদের দাবি হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তা মানুষরূপে জন্ম নিয়েছিল যাকে তারা ‘যিশু’ ডাকে এবং পরে তাকে সৃষ্টিকর্তা তার কাছে তুলে নিয়েছেন! নাস্তিক এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের এসব দাবির যোগ্য জবাব আল্লাহ তায়ালা সূরা ইখলাসের এই তৃতীয় আয়াতে দিয়েছেন।
আবার খ্রিষ্টানরা যখন বলে, আচ্ছা মানলাম, আল্লাহকে কেউ জন্ম দেয়নি এবং তিনিও এখন পর্যন্ত কাউকে জন্ম দেননি; কিন্তু এটার মানে তো এই না যে তাঁর সমান কেউ হতে পারে না, যিশু তো প্রভু হতেই পারেন!

তাদের এই দাবিকেও নস্যাৎ করে দিয়ে আল্লাহ তায়ালা সূরা ইখলাসের সর্বশেষ আয়াতে ঘোষণা দিয়েছেন-
‘ওয়ালাম ইয়া কুললাহু কুফুওয়ান আহাদ’। তাঁর সমকক্ষ আর কিছুই নেই! আরবি ‘কুফু’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে সমকক্ষ।

এখানে আরেকটি ব্যাপার লক্ষণীয়, ‘কুফুওয়ান’ শব্দের পূর্বে ‘লাহু’ সর্বনাম ব্যবহার করে সমকক্ষ না থাকার বিষয়টা শুধু আল্লাহ তায়ালার সাথে খাস করা হয়েছে। এখানে বোঝানো হয়েছে-আল্লাহ ছাড়া বাকি আর সব কিছুর সমকক্ষ থাকতে পারে; কিন্তু একমাত্র শুধু আল্লাহরই কোনো সমকক্ষ নেই এবং থাকতেও পারে না। কারণ তিনি আহাদুন!
এই সূরা ইখলাসের আরেকটা তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে ‘আস-সামাদ’ এবং ‘কুফুওয়ান’ শব্দ দু’টি পুরো কুরআন মাজিদে মাত্র একবার করে ব্যবহার হয়েছে, আর সেটা সূরা ইখলাসেই। কুরআনের অন্য কোনো পারায় অন্য কোনো সূরায় এই দু’টি শব্দ ব্যবহৃত হয়নি।

সর্বোপরি, আমাদের সবার উচিত আল্লাহকে একমাত্র সত্তা হিসেবে আন্তরিক বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে তাওহিদের একচ্ছত্র প্রতিষ্ঠা করা।

লেখিকা :

  • খাদিজা বিনতে জহির সুমাইয়া

শিক্ষার্থী ও প্রবন্ধকার

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com