শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

আড়াই কোটি কর্মহীন লোক থাকলেও ধান কাটায় সঙ্কট

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২০ এপ্রিল, ২০২০
  • ২৭৯ বার

প্রায় আড়াই কোটি শ্রমিক, দিনমজুর কর্মহীন থাকার পরও ধান কাটার লোকের সঙ্কট কাটছে না। ফলে জমিতে পাকা ধান নিয়ে ঘুম নেই কৃষকের। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান কাটতে না পারলে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।

কৃষি কর্মকর্তাদের ভাষ্য, হাওরে প্রতি বছরই শ্রমিক সঙ্কট দেখা যায়। তবে এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অন্য জেলাগুলো থেকে শ্রমিক যেতে পারছে না। ফলে এবার এমন শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কয়েকজন কৃষক জানান, বোরো কাটতে প্রতি বছরই শ্রমিক সঙ্কট দেখা দেয়। কিন্তু এবার সঙ্কট সবচাইতে ভয়াবহ। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চলতি মৌসুমে অন্য জেলা থেকে শ্রমিক আসতে পারছে না। ফলে সঙ্কট আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। কী করবেন তারা বুঝে উঠতে পারছেন না।

বিআইডিএসের হিসাব অনুযায়ী, সব খাতের প্রলম্বিত ছুটি হিসাব করলে বর্তমানে দেশে ২ কোটি ৪২ লাখ মজুর ও বেতনভোগী শ্রমিক এখন কর্মহীন হয়ে বসে আছেন। ওই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ২০১৮ সালের কৃষি ও গ্রামীণ পরিসংখ্যান অনুযায়ী কৃষিশ্রমিক ৭২ লাখ ৯১ হাজার ৮৪০ জন। এর কিছু অংশ মাঠে যেতে পারছে, বড় অংশটি যারা দূরবর্তী অঞ্চলে গিয়ে কৃষিশ্রমিকের কাজ করে, পরিবহন বন্ধ থাকায় তাদেরও ঘরে বসে কঠিন সঙ্কটে দিন কাটছে। বোরো মৌসুমে কাজের জন্য তারা যাতায়াত করতে পারছে না।

সরকারি হিসাবে, চলতি বোরো মৌসুমে দেশে ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, হাওরাঞ্চলে এবার মোট বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে। এসব জমির ধান কাটতে মোট শ্রমিকের প্রয়োজন ৮৪ লাখের মতো। কিন্তু সেখানে শ্রমিকের ঘাটতি আছে ১৫ লাখের বেশি, যা মোট প্রয়োজনের ১৮ শতাংশ। সে হিসাবে এই সময়ে প্রতিদিন প্রায় ৬৬ হাজার অভিবাসী শ্রমিকের প্রয়োজন রয়েছে সেখানে। কিন্তু করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া বেকার ২ কোটি ৪২ লাখ মজুর ও বেতনভোগী শ্রমিকের হিসাব করলে দেখা যায় দেশে বর্তমান চাহিদার তুলনায় ১ কোটি ৫৮ লাখ শ্রমিক অতিরিক্ত রয়েছেন। যাদের কাজে লাগানো গেলে ধানকাটা শ্রমিকের অভাব তো দূরের কথা, অতিরিক্ত দেড় কোটির কর্মসংস্থানই কঠিন হয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক সাইফুল আলম গতকাল মোবাইলে নয়া দিগন্তকে বলেন, তাদের জেলায় মোট ১ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এরই মধ্যে ছয় শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। বাকি ধান কাটতে তারা বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আনার চেষ্টা করছেন। আর যদি শ্রমিক না পান তবে এলাকার রিকশাচালক, ভ্যানচালকসহ এর মধ্যে যারা বেকার হয়ে পড়েছেন তাদের দিয়ে সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করবেন। মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী নয়া দিগন্তকে জানান, করোনা আতঙ্কে বাইরে থেকে শ্রমিক আসতে চায় না। তা ছাড়া যানবাহন বন্ধ থাকায় কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের ৫৩ হাজার ৫৩০ হেক্টর চাষ হওয়া জমির মধ্যে প্রায় ১৬ শতাংশ কাটা হয়েছে। বাকিটা কাটতে শ্রমিক না পেলে চা বাগানের শ্রমিক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক ও অন্য পেশার দিনমজুরদের দিয়েই তারা সঙ্কট কাটানোর চেষ্টা করবেন।

একজন কৃষক জানান, হাওরের ক্ষেত্রে তাদের কাছে সবচেয়ে ভয়ের বিষয়টি হচ্ছে- নয়নভাগা বা আগাম বন্যা। এর মাঝে গণমাধ্যমে আগাম বন্যার পূর্বাভাসের খবরটিও এসেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে তারা জানতে পেরেছেন, ১৭ এপ্রিল থেকে পরের চার দিন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও সংলগ্ন ভারতের মেঘালয়-আসামে ১০০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে। ফলে এ সময় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারেও মাঝারি থেকে ভাীর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিরও আভাস দিয়েছেন। ফলে তাদের মধ্যে বেশি আতঙ্ক কাজ করছে। তিনি বলেন, হাওরের ধান দ্রুত ঘরে তুলতে তাদের একমাত্র বিকল্প যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানো। সরকার এ সহযোগিতা না করলে তাদের সব স্বপ্ন হয়তো পানিতে বিলীন হয়ে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com