– সরকারের মোট পুঞ্জীভূত ঋণ ১৬,৫৫, ১৫৬ কোটি টাকা
– অভ্যন্তরীণ ঋণ ৯,৭৪,০৯২ কোটি টাকা
– বৈদেশিক ঋণ ৬,৮১,০৬৪ কোটি টাকা
বেড়েই চলেছে সরকারের ঋণ গ্রহণ প্রবণতা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৩) শেষে সরকারের মোট (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) পুঞ্জীভূত ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৩৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে বা ২০২৩ সালের জুন শেষে সরকারের মোট পুঞ্জীভূত ঋণস্থিতি ছিল ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সরকারের প্রকৃত ঋণ বেড়েছে ৩৭ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা।
গেল সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণস্থিতির সর্বশেষ এ হিসাব চূড়ান্ত করেছে।
অর্থ বিভাগ সূত্র মতে, করোনা-উত্তর পরিস্থিতি মোকাবেলা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত কারণে সরকারের ব্যয় বাড়ার কারণে সার্বিক ঋণ স্থিতি বেড়েছে। তবে এটি এখনো ঝুঁকিসীমার অনেক নিচে রয়েছে বলে দাবি করা হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ‘টেকসই ঋণ কাঠামো’ (ডেট সাসটেইনেবল ফ্রেমওয়ার্ক-ডিএসএফ)-এর মানদণ্ড অনুযায়ী, জিডিপির ৫৫ শতাংশ ঋণকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, জিডিপি অনুপাতে সরকারের ঋণ বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও কর জিডিপি অনুপাতে এই ঋণ অনেক আগেই বিপদসীমা অতিক্রম করে গেছে। আগামী সরকারের ঋণ ও সুদের দায় আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এবারই প্রথমবারের মতো সরকারের বিদেশী ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
এ দিকে, অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, এই ঋণের বাইরেও সরকার প্রদত্ত কিছু আর্থিক গ্যারান্টি রয়েছে। গত ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে সরকারের পুঞ্জীভূত আর্থিক গ্যারান্টির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশী মুদ্রায় ৯৫ হাজার ৯৪২ কোটি ২১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক উৎসের গ্যারান্টির পরিমাণ ৬৩ হাজার ৬৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎসের গ্যারান্টির পরিমাণ ৩২ হাজার ২৭২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, সার্বিকভাবে টাকার অঙ্কে পুঞ্জীভূত ঋণস্থিতি বাড়লেও গত সেপ্টেম্বর শেষে জিডিপির আকার অনুযায়ী সরকারের ঋণ অনুপাত প্রায় ৩ শতাংশ কমেছে। গত ২০২৩ সালের জুন শেষে সরকারের মোট পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, মোট পুঞ্জীভূত ঋণের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৯২ কোটি টাকা (জিডিপির ১৯.৬৩%) এবং বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ হচ্ছে বাংলাদেশী মুদ্রায় ৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা (জিডিপির ১৩.৭২%)।
এর আগে গত বছরের জুন শেষে সরকারের অভ্যন্তরীণ পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা (জিডিপির ২১.২২%) এবং পুঞ্জীভূত বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল বাংলাদেশী মুদ্রায় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা (জিডিপির ১৫.১২%)।
অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, সরকারের মোট পুঞ্জীভূত ঋণের ৫৯ শতাংশ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ এবং ৪১ শতাংশ হচ্ছে বৈদেশিক ঋণ।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুঞ্জীভূত অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। অন্য দিকে সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এখন এই খাত থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ নেগেটিভ হয়ে গেছে অর্থাৎ, এরই খাত থেকে ঋণ নেয়ার চেয়ে সরকারকে পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি।
সঞ্চয়পত্র খাতে সংস্কারের ফলে বাজেট ঘাটতি পূরণে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে আরো কমে আসবে বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য শূন্যতে নামিয়ে আনতে চায় সরকার।
অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, পুঞ্জীভূত মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের ৫৬ শতাংশ নেয়া হয়েছে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ৩৭ শতাংশ ঋণ নেয়া হয়েছে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে (টাকার অঙ্কে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা) এবং ৭ শতাংশ নেয়া হয়েছে জিপিএফ তহবিল থেকে (টাকার অঙ্কে ৭১ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা)।
ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে গৃহীত পুঞ্জীভূত ঋণের মধ্যে এই সময়ে ট্রেজারি বিল খাত থেকে ১ লাখ ৪২ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, ট্রেজারি বন্ড ও এসপিটিবি খাত থেকে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা ও সুকুক থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে।