নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত চাষাড়া জিয়া হলের উপরে থাকা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনা ঘটে। তবে এর পেছনে কারা জড়িত তা তৎক্ষণাৎ জানা যায়নি।
শহীদ জিয়ার ম্যুরাল ভাঙ্গার পেছনে সরকারি দলকে দায়ী করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হলে সংযমের এদিনে একজন মুক্তিযোদ্ধার ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, সংসদ সদস্য শামীম ওসমান কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন স্থানে বক্তব্য দিয়েছেন জিয়া হলের স্থানে ছয় দফা ভবন করা হবে। আমরা মনে করি জিয়ার ম্যুরাল ভেঙে ফেলা তারই অংশ।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে জিয়া হলে জিয়াউর রহমানের ম্যুরালটি ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা গেলে খবরটি মুহূর্তেই শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতারা।
এ সময় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমরা অত্যন্ত ব্যথিত, হতবাক ও ক্ষুব্ধ। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই জিয়া হল নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসনের অধীনে আছে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তিনি যুদ্ধের পর বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। ১৯ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি এ দেশকে রক্ষা করেছিলেন। তার নামে এ অডিটরিয়াম যেটা জিয়া হল নামে পরিচিত। সরকারি দলের নীলনকশার মাধ্যমে এই ম্যুরাল ভেঙে ফেলে দেয়া হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি কতবার ক্ষমতায় ছিল। আমরা কোথাও হাত দেইনি। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ম্যুরাল যথাস্থানে না বসালে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীকে নিয়ে কর্মসূচি দেব এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আমরা জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছে এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এমন কিছু করবেন না যেন নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হয়। এ সরকারই শেষ সরকার না। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
নারায়ণগগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই বিষয়টি আমার জানা নেই। জেলা প্রশাসন থেকে হলটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ভবনটি ভাঙার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু ম্যুরাল ভাঙার কোনো উদ্যোগ জেলা প্রশাসন নেয়নি। কোনো দুর্বৃত্তরা এই কাজ করে থাকতে পারে। বিষয়টি আমি পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা তদন্ত করে দেখবে।’
একই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ফোন নম্বরে কল দেয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
সম্প্রতি শামীম ওসমান জিয়া হল ভেঙে সেখানে ছয় দফা মঞ্চ করার প্রস্তাবনা রাখেন জাতীয় সংসদে। পরে নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানেও এই হল ভেঙে নতুন করে ছয় দফা মঞ্চ, গ্যালারি ও উন্মুক্ত স্থান নির্মাণ করার ঘোষণা দেন।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়ায় অবস্থিত জিয়া হলের জায়গায় ‘৬ দফা ভবন’ নামে নতুন ভবন করার দাবি জানান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারায়ণগঞ্জে গিয়ে ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। সেখানে বালুর মাঠ নামে একটি মাঠ ছিল। এখানে ঘোষণা দেয়ার পরে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ওই স্মৃতি ভুলিয়ে রাখতে নারায়ণগঞ্জ মিলনায়তন নামের একটি মিলনায়তন করেন। তারা বাধা দিলেও ঠেকাতে পারেননি। পরে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেটাকে ‘জিয়া হল’ নাম দেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে শামীম ওসমান বলেন, তারা চান জেলা পরিষদের মাধ্যমে ওই জায়গায় একটি ভবন হোক এবং এর নাম ‘৬ দফা ভবন’ রাখা হোক। এ বিষয়ে একটি চিঠি দেয়া হলে মন্ত্রী দ্রুত কাজ সম্পন্ন করবেন কি না, তা জানতে চান তিনি।
জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত সব স্থান তাদের সবার কাছে স্পর্শকাতর ও মর্যাদার। কোনো বিষয়ে, কোথাও বঙ্গবন্ধুর প্রতি ন্যূনতম অসম্মান দেখা গেলে জাতি তা বরদাস্ত করবে না। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত জায়গাটিকে মর্যাদার জায়গায় নিতে জেলা পরিষদের যেকোনো পদক্ষেপে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।