কাজের চাপ এবং ক্লান্তি বিবেচনা করে চলমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পুরো আসরে পেসার মোস্তাফিজুর রহমানকে খেলার জন্য অনুমতি দিতে রাজি নয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
চেন্নাই সুপার কিংসের অনুরোধে মোস্তাফিজের অনাপত্তিপত্রের সময় একদিন বাড়িয়েছে বিসিবি। এতে চেন্নাইয়ের জার্সিতে আরো একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন ফিজ। আগামী ২ মে দেশে ফিরবেন এই বাঁ-হাতি পেসার।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজের জন্য মোস্তাফিজকে দেশে ফিরিয়ে আনছে বিসিবি। কিন্তু তাকে ফিরিয়ে আনার অর্থ এই নয়, আফ্রিকার দেশটির বিপক্ষে খেলবেন তিনি।
বিশেষভাবে কাজের চাপ কমানো এবং শতভাগ ফিট ও সতেজ রাখার জন্যই আইপিএল থেকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে মোস্তাফিজকে। চলমান আইপিএলে দারুণ ছন্দে আছেন ফিজ। বিদেশী খেলোয়াড়দের মধ্যে ৫ ম্যাচে ১৮ দশমিক ৩০ গড়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১০ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
আজ বিসিবি ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেছেন, ‘আমরা মোস্তাফিজকে পহেলা মে পর্যন্ত খেলার অনুমতি দিয়েছি। ২ মে দেশে ফিরবেন এবং ৩ মে থেকে পাওয়া যাবে তাকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে খেলানোর জন্যই শুধুমাত্র তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না। আমরা আসলে তার ওপর থেকে কাজের চাপ কমাতে চাই। কাজের চাপ এবং ক্লান্তি সমস্যা নিরসনে পরিকল্পনা দেয়া হবে।’
জালালের বক্তব্যের এক দিন আগে মোস্তাফিজের আইপিএলে খেলার পক্ষে মত দিয়েছিলেন বিসিবির আরেক পরিচালক আকরাম খান। সাবেক ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান ও জাতীয় দলের অধিনায়ক আকরামের মতে, পুরো টুর্নামেন্ট খেললে মোস্তাফিজের নিজের এবং বাংলাদেশের উপকার হবে।
কিন্তু ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়ে জালাল জানান, বিশ্বকাপের আগে আইপিএলের বেশ কিছু ম্যাচ খেলে পুরোপুরি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন মোস্তাফিজ ও সাকিব।
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে গাড়িতে করে ওমানে যান এবং টুর্নামেন্টের ঠিক একদিন আগে ভেন্যুতে পৌঁছান সাকিব। আগেই বিমানে করে আসেন মোস্তাফিজ। বিশ্বকাপের সময় স্পষ্টভাবেই বোঝা গিয়েছিলো, তারা ক্লান্ত। কিন্তু তখন বিষয়টি অস্বীকার করেছিলো বিসিবি। তবে তিন বছর পর ঠিকই বিষয়টি স্বীকার করলেন জালাল।
তিনি বলেন, ‘সবসময়ই জাতীয় দলের স্বার্থ সবার আগে। আপনি জানেন, ২০২১ সালে বিশ্বকাপে যোগ দেয়ার আগে পুরো আইপিএলে খেলেছিলো ওই দুই খেলোয়াড়। তারা ওই সময় ক্লান্ত ছিল। নিজেদের ক্লান্তির কথা তারাও জানিয়েছিলো। আমরা এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই না।’
যদিও পুরো আইপিএলে মোস্তাফিজকে খেলার জন্য অনুমতি দেয়ার পক্ষে অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ। জালাল জানান, এই বয়সে আইপিএলে মোস্তাফিজের শেখার কিছু নেই।
তিনি বলেন, ‘আইপিএল খেলে মুস্তাফিজুরের এখন শেখার কিছু নেই। তার শেখার সময় শেষ। তার চেয়ে মুস্তাফিজের কাছ থেকে আইপিএলের অনেক খেলোয়াড় শিখতে পারে। এতে বাংলাদেশের কোন লাভ হবে না। মুস্তাফিজকে পেয়ে অন্যরা উপকৃত হবে।’
জালাল আরো বলেন, ‘আপনি ভাবতে পারেন এটি চার ওভারের খেলা। কিন্তু আপনি সবসময় ভুলে যান, চার ওভারের জন্য একজন খেলোয়াড় কতটা চাপ নেয়। রাতের বেলাতেও ভ্রমণ করতে হয়। খেলা শেষে রাত ১টায় বিমানবন্দরে গিয়ে ঘুমাতে হয়। এটা অনেক কষ্টের। আমাদের উদ্বেগের বিষয় মোস্তাফিজের শরীর এবং তার ফিটনেস। তার কাছ থেকে তারা শতভাগ নিতে চাইবে। তার ফিটনেস নিয়ে তাদের (ফ্র্যাঞ্চাইজির) কোনো মাথাব্যথা নেই, কিন্তু আমাদের আছে।’
মোস্তাফিজুরকে নিয়ে বিসিবি কঠোর হলেও তাসকিন আহমেদ এবং শরিফুল ইসলামের বিষয়ে একই রকম নয় বলে মনে হচ্ছে। আবাহনীর জার্সিতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) ৫০ ওভারের ম্যাচ নিয়মিত খেলছেন এই দুই পেসার। প্রচণ্ড গরম ও ব্যস্ত আন্তর্জাতিক সূচির পরও প্রশ্ন জাগে, বোর্ড তাদের দিকে খেয়াল রাখছে কিনা।
এর আগে তাসকিন আইপিএল খেলার প্রস্তাব পেলেও অনুমতি দেয়নি বিসিবি। এবারো তার নাম নিলামে নাম উঠার অনুমতি দেয়নি। তাসকিনের মতো শরিফুলকেও অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে তাসকিন ও শরিফুলকে নিয়মিত নজরে রাখা হচ্ছে বলে জানান ইউনুস।
তিনি বলেন, ‘বড় সংস্করনে খেলছেন না তাসকিন। বর্তমানে শুধু ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলছেন। এক্ষেত্রে কাজের চাপ কমে গেছে। যেকোনো ধরনের সমস্যা দ্রুত জানাতে হবে তাসকিনকে। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেননি। কিন্তু তিনি বলেছেন, ভালো অনুভব করছেন। সব দলকেই ক্রিকেট বোর্ড জানিয়েছে, বিশেষ করে পেসারদের বিষয়ে, যদি তারা কোন ধরনের সমস্যা মনে করে, তাহলে তাদেরকে ছেড়ে দিতে হবে।’