বৃক্ষ ও বনায়নে প্রকৃতি ও পৃথিবীর ভারসাম্য
মহান আল্লাহ মানুষের কল্যাণে নানা প্রজাতির পশুপাখি ও জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন। মানুষ ও প্রাণিকুলের বেঁচে থাকার জন্য উদ্ভিদ ও গাছপালা সৃষ্টি করেছেন। আবার পানি ও বায়ুর প্রয়োজন উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের।
পৃথিবীতে বৃক্ষের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকলে অক্সিজেনের অভাবে একসময় মানুষের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবে।
আল্লাহর বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে পরিমিতভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে বৃক্ষ। প্রত্যেক সৃষ্ট বস্তু বা বিষয়ের মধ্যেও আল্লাহ অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর পৃথিবীকে আমি বিস্তৃত করেছি এবং তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি। আর সেখানে আমরা প্রত্যেক বস্তু উৎপন্ন করেছি পরিমিতভাবে।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ১৯)
বৃক্ষ ও বন রিজিকের অন্যতম উৎস : বৃক্ষ ও বনাঞ্চল থেকে উৎপাদিত ফল-ফসল খেয়ে প্রাণিকুল জীবন ধারণ করে। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করি পরিমাণমতো। অতঃপর তা জমিনে সংরক্ষণ করি। আর আমরা ওটাকে সরিয়ে নিতেও সক্ষম। অতঃপর আমি তা দিয়ে তোমাদের খেজুর ও আঙুরের বাগান সৃষ্টি করি। তোমাদের জন্য সেখানে থাকে প্রচুর ফল-ফলাদি এবং তোমরা তা থেকে ভক্ষণ করে থাকো। আর আমরা সৃষ্টি করেছি (জয়তুন) বৃক্ষ, যা সিনাই পর্বতে জন্মায়। যা থেকে উৎপন্ন হয় তেল এবং ভক্ষণকারীদের জন্য রুচিকর খাদ্য।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১৮-২০)
বৃক্ষে আছে অফুরন্ত রিজিক : আল্লাহ বলেন, ‘আর পৃথিবীকে আমরা প্রসারিত করেছি এবং তাতে পাহাড়সমূহ স্থাপন করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি সব ধরনের নয়নাভিরাম উদ্ভিদরাজি। প্রত্যেক বিনীত ব্যক্তির জন্য, যা চাক্ষুষ জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ। আর আমরা আকাশ থেকে বরকতময় বৃষ্টি বর্ষণ করি। অতঃপর তার মাধ্যমে বাগান ও শস্য বীজ উদ্গত করি এবং দীর্ঘ খর্জুর বৃক্ষসমূহ, যাতে থাকে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুরের মোচা। বান্দাদের জীবিকা হিসাবে। আর আমি এর দ্বারা জীবিত করি মৃত জনপদকে। বস্তুত এভাবেই হবে পুনরুত্থান।’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ৭-১১)
বৃক্ষ আল্লাহর মহা কুদরতের নিদর্শন : আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদরাজি। আমরা একই মাটি ও একই পানিতে বিভিন্ন উদ্ভিদ জন্মাতে দেখি। আল্লাহ বলেন, ‘অতএব, মানুষ একবার লক্ষ করুক তার খাদ্যের দিকে। আমরা (কিভাবে তাদের জন্য) বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকি। অতঃপর ভূমিকে ভালোভাবে বিদীর্ণ করি। অতঃপর তাতে উৎপন্ন করি খাদ্যশস্য, আঙুর ও শাক-সবজি, জয়তুন ও খর্জুর, ঘন পল্লবিত উদ্যানরাজি এবং ফল-মূল ও ঘাস-পাতা। তোমাদের ও তোমাদের গবাদি পশুর ভোগ্যবস্তু হিসেবে।’ (সুরা : আবাসা, আয়াত : ২৪-৩২)
একটি চারা হলেও রোপণ করতে হবে : কারো কাছে একটি চারা থাকলেও তা রোপণ করার নির্দেশ দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময়ও এসে যায়, আর তোমাদের হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তাহলে বসা অবস্থায় থাকলে দাঁড়ানোর আগেই যেন সে তা রোপণ করে দেয়। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৩০০৪; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৪৭৯; মুসনাদে বাজজার, হাদিস : ৭৪০৮)
বৃক্ষরোপণে অনন্ত অবিরত সওয়াব : বৃক্ষরোপণ সদকায়ে জারিয়া বা প্রবহমান দান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মানুষের মৃত্যুর পর তার কবরে সাতটি নেক আমলের সওয়াব চলমান থাকে। (১) যে ব্যক্তি (উপকারী) ইলম শিক্ষা দিল বা (২) খাল-নালা প্রবাহিত করল অথবা (৩) কূপ খনন করল বা (৪) ফলবান বৃক্ষরোপণ করল অথবা (৫) মসজিদ নির্মাণ করল বা (৬) কোরআনের উত্তরাধিকারী বানাল অথবা (৭) এমন সুসন্তান রেখে গেল, যে মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। (সহিহুত তারগিব, হাদিস : ৭৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে মুসলমান কোনো বৃক্ষ রোপণ করে কিংবা বীজ বপন করে, তারপর তা থেকে কোনো পাখি, মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু ভক্ষণ করে, তাহলে এর বিনিময়ে তার জন্য একটি সদকার সওয়াব আছে। (বুখারি, হাদিস : ২১৩৭; মুসলিম, হাদিস : ১৫৫৩)
বিনা প্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন নিষিদ্ধ : মহানবী (সা.) অপ্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন করাকে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করেছেন। যেমন তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে কুল বৃক্ষ কর্তন করবে, আল্লাহ তাকে অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২৩৯)
বৃক্ষ নিধন আল্লাহর ক্রোধের কারণ : যারা নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করবে, তারা আল্লাহর ক্রোধের শিকার হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন সে ফিরে যায় (অথবা নেতৃত্বে আসীন হয়), তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্য ও প্রাণী বিনাশের চেষ্টা করে। অথচ আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২০৫)
লেখক : কাসেম শরীফ