বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
নিরবের পরকীয়ার অভিযোগ নিয়ে সুর পাল্টালেন স্ত্রী ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে কী কথা হলো, জানালেন মির্জা ফখরুল ভারত থেকে চিন্ময়ের মুক্তি দাবি কিসের আলামত, প্রশ্ন রিজভীর আইনজীবী হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার ৬ : প্রেস উইং চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ রয়টার্সের মনগড়া সংবাদের প্রতিবাদ জানালো সিএমপি হাইকোর্টের নজরে ইসকন-চট্টগ্রামের ঘটনা : আদালতকে পদক্ষেপ জানাবে সরকার ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা, যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের লেজ রেখে গেছে : তারেক রহমান

কৃষকের মুখে হাসি ফোটালো সূর্যমুখী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২ মে, ২০২০
  • ৩০০ বার

কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় এলাকায় রবিশষ্যের চাষাবাদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। এ বছর সূর্যমুখীর বাম্পার ফলনে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা অর্জনে এই ফুল চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। কৃষকদের পাশাপশি সরকারী কৃষি বিভাগ সহায়তা প্রদান করায় সূর্যমুখী চাষাবাদে দিন দিন ঝুকছে এ অঞ্চলের কৃষক। অপরদিকে উপকূলীয় এ অঞ্চলের মাটির গুনাগুন, অবহাওয়া ও জলবায়ু সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী থাকায় এর চাষাবাদ কৃষকের কাছে লাভজনক হয়ে উঠছে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সূর্যমুখী একটি তেল ফসল। এটি স্থানীয়ভাবে উচ্চ মূল্যের ফসল হিসেবেও পরিচিত। ভোজ্য তেলের মধ্যে সূর্যমুখী শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী তেল। এটি শরীরের কোলেস্টেরল ঠিক রাখে। তাই সূর্যমুখীর চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে সরকার রবিশষ্যের প্রনোদনার আওতায় কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করছে।

সাধারণত জানুয়ারী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে সূর্যমুখীর চাষাবাদ হয়ে থাকে। সূর্যমুখী চাষাবাদের এ সময়টায় এই অঞ্চলের অনেকটা জমি ফাঁকা থাকে। মার্চ এপ্রিলের মধ্যে ফসল কাটার উপযোগী হয়।

কৃষি বিভাগ সূত্র আরো জানায়, উপজেলায় এ বছর ৫০ হেক্টর জমি সূর্যমুখী চাষাবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। চাষাবাদ হয়েছে প্রায় ৮০ হেক্টর। উপজেলার প্রতি ইউনিয়নে কম বেশি সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। এ বছর সূর্যমুখীর চাষাবাদে এগিয়ে রয়েছে নীলগঞ্জ, টিয়াখালী, লতাচাপলি ও কুয়াকাটা পৌরসভা। উপজেলায় প্রায় তিন শ’ কৃষক সূর্যমুখীর চাষাবাদ করেছে। এটির চাষাবাদে পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি প্রস্তুত, বীজ রোপণ, সার প্রয়োগ, আন্ত:পরিচর্যা, সেচ ও বালাই নাশক প্রয়োগে হেক্টর প্রতি খরচ পড়ে ৩৫ হাজার টাকা। এতে হেক্টর প্রতি নিচে ৪১ মন ফলন হলেও তা বিক্রয় হয় প্রায় এক লাখ ১২ হাজার টাকায়।

উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের যুবক গোলাম সরোয়ার (৩২) বলেন, ‘‘আমি এ বছর এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। এতে আমার জমি প্রস্তুত খরচ হয় দেড় হাজার টাকা, সেচ খরচ ছয় শ’ টাকা, আগাছা নিধন, নিরানী ও বেড তৈরিতে খরচ চব্বিশ শ’ টাকা এবং বালাই নাশক প্রয়োগ দুই শ’ টাকা সহ মোট খরচ হয় চার হাজার সাত শ’ টাকা। দু’একদিন আগে আমি ফসল কেটে ঘরে তুলেছি যা আনুমানিক পাঁচ মন। স্থানীয় বাজারে প্রতিমণ সূর্যমুখী’র দানা বিক্রী হচ্ছে ২৭০০ টাকা, যাতে কমপক্ষে আমি ১০,৮০০ টাকায় ফসল বিক্রী করতে পারবো। এ বছর কৃষি বিপণন অধিদফতর মাঠ পর্যায় থেকে কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে সূর্যমুখী কেনার কথা রয়েছে। যাতে আমি সন্তোষজনক মূল্য পাবো আশা করছি। কৃষি বিভাগ আমাকে বিনামূল্যে বীজ, সার সরবরাহ করা সহ মাঠ পর্যায়ে এসে সার্বক্ষনিক পরামর্শ দিয়েছে।’’

নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সদরপুর গ্রামের স্নাতক ডিগ্রী ধারী যুবক মার্টিন বৈরাগী (৩৮) বলেন, ‘এ বছর আমি তিন বিঘা জমিতে প্রথমবারের মত সূর্যমুখী চাষ করেছি। আমার জমি প্রস্তুত খরচ হয় তিন হাজার টাকা, সমন্বিত সার প্রয়োগ খরচ তিন হাজার টাকা, বীজ রোপন খরচ হয় তিন হাজার টাকা, পানি সেচ খরচ এক হাজার টাকা, ছত্রাক নাশক খরচ হয় পাঁচ শ’ টাকা, অতিরিক্ত বীজ খরচ তিন হাজার টাকা এবং ফসল কাটা ও মাড়াই খরচ দুই হাজার টাকা সহ আমার মোট খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। আমি কমপক্ষে ১৫ মন ফসল পেয়েছি। যা থেকে আমার ব্যবহারের জন্য রেখে উদ্বৃত্ত ফসল বিক্রী করবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি কৃষি বিভাগের পরামর্শ ছাড়াও চাষাবাদ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। জমি চাষ দিয়ে বীজ রোপণের পূর্বে এমওপি, ডিওপি, ইউরিয়া, টিএসপি, জিপসাম মিশিয়ে সমন্বিত সার প্রয়োগ করেছি। এরপর এক সারি থেকে অপর সারির দূরত্ব কমপক্ষে দুই ফুট এবং একটি বীজ থেকে অপর বীজ রোপণের স্থান দেড় ফুট দরত্ব বজায় রেখেছি। গাছ এক ফুটের কাছাকাছি এলে সেচ ও সার প্রয়োগ করেছি। সূর্যমুখী গাছের গোড়ায় ছত্রাক আক্রমণ করে থাকে। এতে গাছ শুকিয়ে নির্জীব হয়ে যায়। ছত্রাক আক্রমণ করা গাছগুলো গোড়াসহ উপড়ে সতেজ গাছগুলোতে ছত্রাক নাশক এমকোজিম স্প্রে করেছি। এতে আমার ফলন মোটামুটি ভাল হয়েছে। তবে শেষ দিকে সেচের পানির একটু সঙ্কট না থাকলে আরো ভাল ফলন পেতাম। প্রথমবার হলেও আমি সূর্যমুখী চাষ করে কমবেশী সফল হয়েছি। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সহ স্থানীয়রা আমার সূর্যমুখী ক্ষেত দেখেতে আসে। তবে সূর্যমুখী প্রক্রিয়াজাত করণে এখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় পুরনো সেই পদ্ধতিতে নির্ভর করতে হচ্ছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, ‘সূর্যমুখী একটি উচ্চমূল্যের তেল ফসল। এটি ভোজ্য তেল হিসেবে শরীরের জন্য খুব উপকারী। এ অঞ্চলের মাটির মাঝারি ধরণের লবনাক্ততা, আবহাওয়া ও জলবায়ু সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী। তাই কৃষককে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী করার জন্য আমরা বীজ সার সহ নানা ধরণের সহায়তা দিচ্ছি। যাতে কৃষকরা স্বল্প খরচে অধিক লাভবান হতে পারে।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com