তিনি বলেন, ‘বিক্ষিপ্তভাবে মাঝে মাঝে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেলেও আগুনের ভয়াবহতা এখন আর নেই। অগ্নিকাণ্ড এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের মরাভোলা নদীর বিভিন্ন স্থানে পাইপ বসিয়ে সেখান থেকে পানি দেওয়া হচ্ছে। বাগেরহাট, মোংলা, কচুয়া, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলাসহ ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট এই কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
স্থানীয়দের ধারণা, প্রায় ১০ একর বনভূমিতে এই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা আরো জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সুন্দরবনের বিভিন্ন বিলে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ধানসাগর ও জিউধরা স্টেশনের আওতায় এমন অসংখ্য বিল রয়েছে। এসব বিল পরিষ্কার করার জন্য শুষ্ক মৌসুমের এই সময়টাতে ওই সব অসাধু জেলেরা ইচ্ছাকৃত বনে আগুন ধরিয়ে দেয়। যাতে আগাছা পরিষ্কার হয়ে বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরতে সহজ হয় তাদের।
এদিকে ২০০২ সালের ২২ মার্চ থেকে চলতি বছরের (২০২৪) ৪ মে পর্যন্ত সুন্দরবনে ২৪ বার অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনাই মানবসৃষ্ট। ভুলে, ক্ষোভে অথবা অসতর্কতায় এসব অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এসব ঘটনায় প্রতিটিরই তদন্ত কমিটি গঠন বা দু-একটি মামলা হলেও আজ পর্যন্ত কোনোটিরই রহস্যভেদ হয়নি। ফলে প্রতিবছরই এ ধরনের নাশকতা ঘটেই চলেছে বলে স্থানীয়রা জানান।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নূরুল করীম জানান, অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানাদেবকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন জিউধরা স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. ওবায়দুর রহমান ও ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. রবিউল ইসলাম। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে আগুন লাগার সঠিক কারণ উদ্ঘাটনসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনার উপপরিচালক মামুন মাহমুদ জানান, খবর পেয়ে প্রথম দিন ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট গিয়ে শুধু পাইপ স্থাপনের কাজ করে। কিন্তু অগ্নিকাণ্ড এলাকা দুর্গম হওয়ায় এবং অন্ধকার নেমে আসায় কিছুই করা যায়নি। আজ (রবিবার) ভোর ৫টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের নতুন আরো দুটি ইউনিটসহ মোট পাঁচটি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। যেখানে ধোঁয়া উড়ছে সেখানেই পানি দেওয়া হচ্ছে। এখন আর তীব্রতা নেই। এ ছাড়া বিমানবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে পানি ছিটানোয় আগুন নিয়ন্ত্রণ আরো সহজ হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে অবস্থান করবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।