লেখালেখি একটি আর্ট, একটি নান্দনিক শিল্প। কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে লেখনীর গুরুত্ব অপরিসীম। লিখতে হয় কলম দিয়ে। আর কলম নামে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিজ্ঞানময় কুরআনুল কারিমে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল করে লেখনীর প্রতি উৎসাহিত করেছেন। বিশ্বনবী সা:-এর প্রতি বিশ্বপ্রতিপালকের প্রথম নাজিল করা বাণীগুলোয় ছিল তিন অক্ষরের ছোট একটি শব্দ কলমের গুণগান। যেমন মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, পড়ো তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক থেকে। পড়ো আর তোমার রব মহামহিম। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। (সূরা আল আলাক-১-৪)
রাসূল সা: বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। (বুখারি) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, যে কেউ অনু পরিমাণ সৎকাজ করবে সে তা দেখতে পাবে, আর যে কেউ অণুু পরিমাণ মন্দ কাজ করবে সে তাও দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল-৭-৮) ইসলাম কলমের কালিকে অত্যন্ত মর্যাদার চোখে দেখে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা লেখে না, ইসলাম মনে করে সে নিজের এবং অন্যের অধিকার নষ্ট করছে। নিজের অধিকার নষ্টের অর্থ হলো নিজেকে ফলপ্রসূ হওয়া থেকে বঞ্চিত করা, উত্তম কাজগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা। ইসলাম সম্পর্কে মানুষকে জানতে না দেয়া। আর অন্যের অধিকারের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সাধারণত মানুষ তার সারগর্ভ দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে পথহারা অনেক মানুষ সত্য সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারেনি। একটি লেখা শুধু সমকালীন মানুষকেই লাভবান করে না বরং ওই লেখা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আদর্শ সমাজ গঠনে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে।
লেখালেখি একটা সদকায়ে জারিয়াও বটে। হাদিসে এসেছে মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার আমলের সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়, শুধু তিনটি চালু থাকে। ১. সদকায়ে জারিয়া। ২. ইলম, যার দ্বারা মানুষের উপকার হয় এবং ৩. সুসন্তান, যে পিতা-মাতার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম) তাই যারা জানে তাদের অবশ্যই লেখালেখি করে সদকায়ে জারিয়ার সুযোগ নেয়া উচিত। আসলেই লেখার ভেতরে যে জ্ঞান থাকে সাধারণত মানুষ তা পড়ে সঠিক পথ পায়। তাই পথহারা মানুষকে আলোর পথ দেখাতে হলে লেখালেখি করে সমাজে উপস্থাপন করতে হবে। একটি ভালো লেখা যুগ যুগ ধরে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে।
আরেকটি হাদিসে এসেছে, নিশ্চয়ই সৎকাজের পথপ্রদর্শক তা সম্পাদনকারীর অনুরূপ। (তিরমিজি)
বিশ্ববিখ্যাত মনীষী সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী বলেছেন- ‘ধারালো তলোয়ারের যতটা প্রয়োজন, শাণিত কলমের প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি।’ পৃথিবীতে যে কোনো আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য লেখালেখির গুরুত্ব অনেক। আদর্শকে পাঠকের কাছে সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলাই দক্ষ লেখকের কাজ। আদর্শবান লেখকরা লিখনীর মাধ্যমে মানুষকে সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান করেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের উপকরণ জোগান। সমাজ পরিবর্তনে অবদান রাখেন। ইখলাসের সাথে লেখালেখি করলে সওয়াবও পাওয়া যাবে। মনে রাখা দরকার, জীবনের আয়ুর চেয়ে লেখার আয়ু অনেক বেশি।
লেখক :
সহকারী শিক্ষক. নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, পাংশা, রাজবাড়ী।